প্রোটোকল ভেঙে পুতিনকে স্বাগত মোদির, দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের ভারত-রাশিয়া বৈঠক

ভারত সফরে পুতিনকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে পৌঁছালেন মোদি। ৭ লোককল্যাণ মার্গে নৈশভোজ, আজ একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আলোচনার সম্ভাবনা।

ভারত সফরে পুতিনকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে পৌঁছালেন মোদি।
ভারত সফরে পুতিনকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে মোদি। ছবি: এক্স

নয়াদিল্লি : ভারত সফরে এসে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছালেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল ভেঙে তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই নিজের গাড়িতে পুতিনকে বসিয়ে একসঙ্গে রওনা দিলেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ৭ লোককল্যাণ মার্গের উদ্দেশে। কূটনৈতিক মহলে এই ‘গাড়ি-কূটনীতি’কে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সাধারণত কোনও রাষ্ট্রনেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে যান বিদেশমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা। তবে ‘বন্ধু’ পুতিনের জন্য মোদি নিজেই হাজির হন, যা নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও। এর আগে অর্গানাইজারে প্রকাশিত প্রতিবেদন ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়েছিল—গত ৩১ আগস্ট এক জরুরি পরিস্থিতিতে পুতিনের গাড়িতে প্রায় ৪৫ মিনিট ছিলেন মোদী। অভিযোগ ওঠে সিআইএ-র পক্ষ থেকে মোদিকে লক্ষ্য করে সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা ছিল ওইদিন। যদিও এ বিষয়ে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এ বার ৩০ ঘণ্টার ভারত সফরে নৈশভোজে যোগ দেওয়ার জন্য রাতে ৭ লোককল্যাণ মার্গে পৌঁছান পুতিন। শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন সেরে শুরু হবে দিনভর বৈঠক পর্ব।

দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে আজ অনুষ্ঠিত হবে ২৩তম ভারত–রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য এবং কৌশলগত সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি সই হতে পারে। রাশিয়া থেকে আরও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা এবং পন্টসায় যৌথ উদ্যোগে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তৈরির বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা প্রবল। পাশাপাশি, রাশিয়ার প্রস্তাবিত পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান ‘সুখোই এসইউ-৫৭’ যৌথভাবে তৈরির বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর।

বাণিজ্য ঘাটতি কমানোও মোদি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। রাশিয়া থেকে ভারত বিপুল পরিমাণ তেল ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করলেও ভারতীয় পণ্যের রফতানি তুলনায় অনেক কম। মস্কোয় ভারতীয় সামুদ্রিক পণ্য, আলু, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও ওষুধের রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। একইসঙ্গে রাশিয়ার শিল্প খাতে ভারতীয় দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হবে।

ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। পুতিনের সফরে এ নিয়ে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রের দাবি। তেলের সরবরাহ, সন্ত্রাস দমন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুও আজকের বৈঠকে গুরুত্ব পেতে পারে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে পুতিন জানান, মহাকাশ গবেষণা, পরমাণুশক্তি, বিমান ও জাহাজ নির্মাণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—বহু ক্ষেত্রেই দুই দেশ ভবিষ্যতের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করছে। মোদীর নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন তিনি।

মোদি–পুতিন বৈঠকের পরেই স্পষ্ট হবে—ভারত কি আবার নেহরু–ইন্দিরা যুগের কূটনৈতিক ভারসাম্যের পথে ফিরছে, নাকি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন কোনও সমীকরণের জন্ম দিচ্ছে এই সফর।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন