বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরলেন সোনালি, স্বামী-সহ চারজন এখনও অনিশ্চয়তায়

বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরলেন সোনালি খাতুন ও তাঁর ছেলে। কিন্তু স্বামী-সহ চারজনের প্রত্যাবর্তন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরলেন সোনালি, স্বামী-সহ চারজন এখনও অনিশ্চয়তায়

কলকাতা : বাংলাদেশে আট মাসের দুঃসহ দিন কাটিয়ে অবশেষে নিজের দেশে ফিরলেন বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালি খাতুন। শনিবার দুপুরে আট বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে মালদা মেডিক্যাল কলেজ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে বীরভূমের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। দেশে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সোনালি।

সোনালি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জীবনে আর কোনওদিন দিল্লিতে কাজ করতে যাবেন না। দিল্লি পুলিশ ও বিএসএফ তাঁর সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করেছে, সে কথাও প্রকাশ্যে জানান তিনি। তবে দেশে ফিরেও উদ্বেগ কাটছে না তাঁর, কারণ স্বামী দানেশ ও সুইটি বিবির পরিবার-সহ চারজন এখনও বাংলাদেশেই আটকে রয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ‘মানবিকতার খাতিরে’ শুধু সোনালি ও তাঁর ছেলেকে দেশে ফেরানো হয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বাকি চারজনের প্রত্যাবর্তন আটকে যাবে? এমনকি সন্তান জন্মের পর সোনালিকেও কি বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হতে পারে? এখনও সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

মালদা সীমান্তে পুশব্যাক হওয়া ছয় ভারতীয়কে ফেরত আনা হয়েছিল বলে দাবি করেন মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ। কিন্তু ভারত প্রবেশাধিকারে অনুমতি দেওয়া হয় কেবল সোনালি ও তাঁর সন্তানকে। বাকি চারজনের বিষয়ে ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার কোনও উত্তর না দিয়ে সীমান্ত ত্যাগ করেন বলে অভিযোগ।

আইনি লড়াইয়ের পথ এখনও জটিল। দিল্লি থেকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়ায় সোনালিদের ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলায় রাজ্যের পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও সঞ্জয় হেগড়ে সোনালি-সহ সকলকে দেশে ফেরানোর দাবি তোলেন। কিন্তু কেন্দ্র দাবি করছে, সোনালি-সহ ছ’জনই নাকি বাংলাদেশি নাগরিক; মানবিক কারণে কেবল সোনালিকেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, ‘অনুপ্রবেশকারীদের জন্য রেড কার্পেট বিছানো যায় না’—এই মামলার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাতের মাঝেই সোনালিদের পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

তবে তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলামের আশা, ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর বাকি চারজনকেও দেশে ফেরানোর পথ খুলে যাবে। তাঁর দাবি, ১৯৫২ সালের জমির দলিল থেকে এসআইআর পর্যন্ত বহু নথিতে সোনালিদের নাম রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টও কেন্দ্রকে চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল, যা কেন্দ্র চ্যালেঞ্জ করলেও প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সোনালিকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।

সোনালি দেশে ফিরলেও স্বামী ও স্বজনদের ফিরে পাওয়া নিয়ে তাঁর উৎকণ্ঠা আরও স্পষ্ট। তাঁর কথায়, “নিজের দেশ তো নিজের দেশই হয়। কিন্তু ওরা কবে ফিরবে সেটাই এখন বড় চিন্তা।”



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন