বাবরি মসজিদের নির্মাণের ঘোষণায় দল থেকে সাসপেন্ড হুমায়ুন কবীর; উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের রাজনীতি

বাবরি মসজিদের নকল নির্মাণের ঘোষণা ঘিরে তৃণমূলের এমএলএ হুমায়ুন কবীরকে স্থগিত করা হল। তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরে না দাঁড়ানোর কথা জানাতেই পরিস্থিতি আরও জটিল। প্রশাসন উচ্চ সতর্কতায়।

বাবরি মসজিদের নির্মাণের ঘোষণায় দল থেকে সাসপেন্ড হুমায়ুন কবীর; উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের রাজনীতি

কলকাতা : বাবরি মসজিদের নকল নির্মাণের ঘোষণা ঘিরে উত্তেজনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেস ঘোষণা করে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মন্তব্যের দায়ে স্থগিত করা হল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, কবীরকে এর আগে সতর্ক করা হয়েছিল। “হঠাৎ বাবরি মসজিদ কেন? আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে স্থগিত করা হয়েছে।”

বেলডাঙ্গায় ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের নকল শিলান্যাস করার পরিকল্পনা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। দলীয় সূত্রে খবর, শুক্রবারই তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজস্ব দল গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কবীর। স্থগিতাদেশের ঠিক পরেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহরমপুরের সভা থেকে সরে যান।

রাজনৈতিক উত্তাপের মাঝেই হুমায়ুন কবীর জানিয়ে দেন, তিনি কোনওভাবেই পিছিয়ে আসবেন না। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছি না। আগামীকালই পদত্যাগ করব। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করবই। কারও ক্ষমতা থাকলে আমাকে আটকাক। প্রয়োজন হলে জীবনের বিনিময়েও করব।” তিনি আরও দাবি করেন, মুসলিম সমাজের অনুদানে তিনি মসজিদ নির্মাণ করবেন এবং নিজের ঘোষণায় তিনি “অটল”।

এদিকে ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে কবীরকে “গদ্দার” বলে কটাক্ষ করেন। বহরমপুরের জনসভা থেকে তিনি বলেন, “সব ধর্মেই কিছু গদ্দার থাকে। কেউ কেউ টাকা খেয়ে বিজেপির তাবেদারি করে।” মেয়র ফিরহাদ হাকিমও অভিযোগ করেন যে, বিজেপি ধর্মীয় বিভাজন তৈরিতে এমন প্ররোচনা দিচ্ছে।

বাবরি মসজিদের নকল নির্মাণের ঘোষণায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে মুর্শিদাবাদ জুড়ে। জেলা প্রশাসন জানায়, অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি থাকলেও পুরো জেলা জুড়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস প্রশ্ন তোলেন, কবীরের মন্তব্যে যদি আইনশৃঙ্খলা সমস্যা তৈরি হয়, তবে কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, “মুর্শিদাবাদকে কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেওয়া হবে না। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বরদাস্ত করা হবে না।”

অন্যদিকে, বিজেপির মুখপাত্র প্রাতুল শাহদেও কবীরকে নিশানা করে বলেন, এ ধরনের মন্তব্যের উদ্দেশ্যই “সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি”। বাবর, আকবর, শাহজাহান বা ঔরঙ্গজেবের নামে স্মারক তৈরির চেষ্টা করলে আবারও বাবরি-মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান ঘিরে মুর্শিদাবাদের রাজনীতি ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। প্রশাসনের নজর এখন কবীরের আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ এবং নকল বাবরি মসজিদের শিলান্যাস অনুষ্ঠানের দিকেই।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন