কলকাতায় ‘হিন্দু সংখ্যা কমছে’ মন্তব্যে রাজনৈতিক ঝড়, ব্রিগেডে গীতা পাঠকে কেন্দ্র করে চড়ছে উত্তাপ

ব্রিগেডে পাঁচ লক্ষ মানুষের গীতা পাঠকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত। তারমধ্যে পারদ চড়ালেন শুভেন্দু।

কলকাতায় ‘হিন্দু সংখ্যা কমছে’ মন্তব্যে রাজনৈতিক ঝড়, ব্রিগেডে গীতা পাঠকে কেন্দ্র করে চড়ছে উত্তাপ

ইংলিশবাজার : মালদার ইংরেজবাজারে হনুমান মন্দিরের উদ্বোধনে এসে ফের রাজ্য রাজনীতিতে পারদ বাড়ালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ‘কলকাতায় দ্রুত কমছে হিন্দুদের সংখ্যা’, এবং যদি এখনই হিন্দু সমাজ ঐক্যবদ্ধ না হয়, তা হলে আগামী কুড়ি বছরের মধ্যেই রাজ্যের রাজধানীতে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। তাঁর এই মন্তব্য মুহূর্তে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

শুভেন্দু জানান, হিন্দুদের সেই ঐক্যের ডাক দেবার জন্যই আগামী ৭ ডিসেম্বর ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে পাঁচ লক্ষ মানুষের গীতা পাঠের বিশাল সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। মালদার রাস্তায় দীর্ঘ পদযাত্রা করে তিনি আবেদন করেন, মালদার সাধারণ মানুষও যেন বিপুল সংখ্যায় এই ধর্মীয় পাঠের আসরে যোগ দেন।

বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্য ও ব্রিগেড সমাবেশের ঘোষণা নিয়ে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামদলগুলি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের কটাক্ষ, “শুভেন্দুই পরিষ্কার করে দিলেন যে গীতা পাঠ রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ছাড়া কিছু নয়। আগে সাধুসন্ন্যাসীদের সামনে রেখে ডাক দেওয়া হত, এখন বিরোধী দলনেতা নিজেই বলছেন ‘মাঠে লড়াই হবে’। গীতা পাঠ একটি উপলক্ষ মাত্র, লক্ষ্য ২০২৬-এর ভোট—মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি।”

কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের বক্তব্য আরও সরাসরি। তাঁর অভিযোগ, পাঁচ লক্ষ মানুষের সমাবেশের পরিকল্পনা আসলে আরএসএসের ‘ব্লুপ্রিন্ট’। তাঁর মন্তব্য, “২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে অস্থিরতা ছড়ানোই আরএসএসের উদ্দেশ্য। তাই গীতা পাঠের নাম করে সমাবেশ ডাকা হচ্ছে এবং সঙ্গে আনা হচ্ছে আরএসএসের বিতর্কিত নেত্রী সাধ্বী রীতম্ভরাকে। এটা স্পষ্ট—ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক মাঠ গরম করার চেষ্টা চলছে।” তিনি মনে করিয়ে দেন লালকৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা এবং তার পরবর্তী সময়ে বাবরি মসজিদের ধ্বংস। অনেকেই এই তুলনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।

এদিকে সোমবার হওয়া ‘কলস যাত্রা’ নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়েছে। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হতে চলেছে’। যা দেখে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ বাম শিবির। তাদের অভিযোগ, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি।

একজন বাম নেতা সরাসরি বলেছেন, “গীতা পাঠ যার কাজ সে করবে। কিন্তু গীতার নাম করে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা মানবধর্মবিরোধী। প্রয়োজনে জনগণকে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

সব মিলিয়ে ব্রিগেডে পাঁচ লক্ষ মানুষের গীতা পাঠকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত। অনুষ্ঠানটি প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় আয়োজন, নাকি রাজনৈতিক শক্তিপরীক্ষার মঞ্চ—এই প্রশ্ন ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা, আর দিন যত ঘনাচ্ছে, ততই বাড়ছে উত্তাপ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন