‘তেজস’ ভেঙে পড়ায় প্রতিরক্ষায় ভারতের আত্মনির্ভরতা ও সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের মান নিয়ে কি প্রশ্ন উঠে গেল?

HAL সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রদর্শনীর জন্য বিশেষ প্রস্তুতিতে থাকা তেজস মার্ক-১এ মডেলটি পাঠানোর আগে একাধিক রুটিন গ্রাউন্ড চেক সম্পন্ন হয়েছিল।

‘তেজস’ ভেঙে পড়ায় প্রতিরক্ষায় ভারতের আত্মনির্ভরতা ও সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের মান নিয়ে কি প্রশ্ন উঠে গেল?

নয়াদিল্লি : দুবাই এয়ার শো-তে উড়ানের সময় ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ তেজস যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার ঘটনাটি প্রথমে স্বাভাবিক ভাবেই আলোচনায় আসে। আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টের এমন দুর্ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে—এটি কি ভারতের আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির পথে ধাক্কা? কিন্তু তথ্য বলছে, এই বিপর্যয় ভারতীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সমগ্র সক্ষমতার কোনও সার্বিক ব্যর্থতা নয়, বরং নিয়মিত পরীক্ষামূলক অভিযানের মধ্যে থাকা একটি যন্ত্রের অপ্রত্যাশিত ত্রুটি মাত্র। ভারতীয় বায়ুসেনা এবং HAL-এর শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্যও স্পষ্ট—এই দুর্ঘটনা ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন বা প্রযুক্তিগত মানকে কোনও ভাবেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলতে পারে না।

HAL সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রদর্শনীর জন্য বিশেষ প্রস্তুতিতে থাকা তেজস মার্ক-১এ মডেলটি পাঠানোর আগে একাধিক রুটিন গ্রাউন্ড চেক সম্পন্ন হয়েছিল। আকাশে ওড়ার পর শেষ মুহূর্তে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। গত বছরের মার্চে রাজস্থানের জৈসলমেরের কাছে ভেঙে পড়েছিল একটি তেজস। সেই ঘটনায় পাইলট সম্পূর্ণ নিরাপদে ইজেক্ট করতে পেরেছিলেন—এটাই প্রমাণ করে, সিস্টেম সেফটির মান আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যথেষ্ট দৃঢ়। আন্তর্জাতিক কোনও বিমান প্রদর্শনীতে পরীক্ষামূলক বা প্রোটোটাইপ মডেলের এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। আমেরিকার এফ-৩৫, ইউরোপের টাইফুন, এমনকি রাশিয়ার সু-৫৭—সব উন্নত যুদ্ধবিমানই তাদের বিকাশ পর্যায়ে একাধিক দুর্ঘটনার মুখ দেখেছে। তা সত্ত্বেও সেগুলি বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কমব্যাট প্লাটফর্ম হিসেবে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেজসের এই দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিত। কারণ এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই ১০ হাজার ঘণ্টার বেশি সফল উড়ান সম্পন্ন করেছে, এবং ভারতীয় বায়ুসেনা ৮৩টি মার্ক-১এ বিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শুধু তাই নয়, আর্জেন্টিনা, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া-সহ একাধিক দেশ তেজস কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে—যা আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির প্রতি আস্থারই বহিঃপ্রকাশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনা চাপা দেওয়ার পরিবর্তে তা স্বচ্ছভাবে তদন্ত করা এবং ত্রুটি কোথায় হয়েছে তা খতিয়ে দেখাই পরিপক্ব প্রতিরক্ষা উন্নয়ন ব্যবস্থার অন্যতম পরিচয়। HAL ইতিমধ্যেই বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে এবং যে কোনও ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা সংশোধনের মাধ্যমে তেজসের নিরাপত্তা ও ক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে। আসলে নিজেদের প্রযুক্তি নিজে তৈরি করা মানেই এমন কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শুধু কেনা যুদ্ধবিমান চালালে এই অভিজ্ঞতা আসে না। আত্মনির্ভরতার পথ কখনওই মসৃণ নয়—কিন্তু প্রতিটি ধাক্কাই ভবিষ্যতের সাফল্যের ভিত্তি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুবাইয়ে তেজসের দুর্ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক, কিন্তু তা ভারতের প্রতিরক্ষা মান বা আত্মনির্ভরতার স্বপ্নকে একটুও ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। বরং বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতীয় প্রযুক্তির আগ্রহ, বিনিয়োগ ও উন্নতির পথ আরও সুদৃঢ় করেছে।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন