আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখুন, শাহের অনুপ্রবেশ মন্তব্যে তৃণমূলের পাল্টা আক্রমণ

সংসদ সাগরিকা ঘোষের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তায় বারংবার ব্যর্থ হয়ে থাকলে শাহের উচিত অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়া।

আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখুন, শাহের অনুপ্রবেশ মন্তব্যে তৃণমূলের পাল্টা আক্রমণ

কলকাতা :
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অনুপ্রবেশ মন্তব্য ঘিরে ফের তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর। অমিত শাহ দাবি করেছেন, দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় অনুপ্রবেশ রোধ করা জরুরি, অথচ বিরোধী দলগুলি অনুপ্রবেশকারীদের ‘রক্ষায়’ নেমেছে। এরপরেই শাহের দাবিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—অপরকে দোষারোপ নয়, আগে আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন। তাঁর 
কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাজরিকা ঘোষ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, একজন অক্ষম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেই শাহ পরিচিত হয়ে উঠেছেন। সীমান্ত নিরাপত্তা তাঁর দায়-দায়িত্ব, অথচ দেশ একের পর এক জঙ্গি হামলার সাক্ষী থেকেছে। পোহেলগাঁও থেকে দিল্লি, এমনকি পুলওয়ামা—প্রতিটি ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা দেশবাসী দেখেছে। নিরাপত্তা ঘাটতির দায় এড়ানোর বদলে অমিত শাহ সারাক্ষণ নিজের রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত। সাগরিকার দাবি—জাতীয় নিরাপত্তায় বারংবার ব্যর্থ হয়ে থাকলে শাহের উচিত অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়া।

শুক্রবার গুজরাতের ভুজে বিএসএফের একটি অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অবিরাম কাজ করছে বিএসএফ। ভারতে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা কেবল দেশের নিরাপত্তারক্ষার জন্যই প্রয়োজন তা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দূষিত হওয়া থেকে রক্ষার করাও এর উদ্দেশ্য। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল সরকারের অনুপ্রবেশ-বিরোধী অভিযানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।" তিনি বলেন, ‘‘এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকার সংশোধনের যে কাজ চলছে, তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে বিরোধী শিবির।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, একদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে রাজ্যে এসআইআর সাময়িক স্থগিত রাখার দাবি জানান। তিনি সেক্ষেত্রে এসআইআর-এর কারণে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করেন।

শাহ এদিন নির্দিষ্ট কোনও দলের নাম উল্লেখ না করলেও তৃণমূলের প্রশ্ন— সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনেই কাজ করে। তবে অনুপ্রবেশকারীরা এল কোথা দিয়ে? যদি সত্যিই অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তার পুরো দায় কি কেন্দ্রীয় সরকার এড়াতে পারে? বিরোধী সরকার ফেলার রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকার বদলে যদি দিল্লি সত্যিই দেশের সুরক্ষায় মন দিত, তবে হয়তো এত ব্যর্থতা দেখতে হত না।—জনগণকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করবেন না। নিজের দায়িত্ব পালন করুন বা ইস্তফা দিন।

তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী তো আরও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্টে বলেন, শাহ বলেছেন, দেশে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ ঠিক করতে পারে না। আপনার দলেরই পঞ্চায়েত সদস্য অনুপ্রবেশকারী! দুই দেশের ভোটার লিস্টেই তার নাম আছে। আপনাদের হাত ধরেই তো অনুপ্রবেশকারীরা বিধানসভা, সংসদ, পঞ্চায়েতে জায়গা পেয়েছে।” নিশীথ প্রামাণিক থেকে বিপ্লব দেব—রাজ্যের রাজনীতিতে বিজেপির বহু গুরুত্বপূর্ণ নেতার জন্মসূত্র নিয়ে যেভাবে বিতর্ক রয়েছে, তৃণমূল সেই ঘটনাগুলির দিকেই আঙুল তুলেছে। অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ—“আগে নিজেদের দলে শুদ্ধিকরণ করুন, তারপর অন্যের দিকে অভিযোগের তির ছুড়ুন।”

অমিত শাহের করা রাজনৈতিক অভিযোগ উলটে এখন তাঁর বিরুদ্ধেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তায় ব্যর্থতা, সীমান্তে নজরদারির দুর্বলতা, আর নিজের দলের মধ্যেই অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতি—এই তিন প্রশ্নের জবাব আজ দেশবাসী জানতে চাইছে। তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট—ভোটের আগে বিভাজনের রাজনীতি নয়, প্রকৃত জবাবদিহিই চাই।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন