মুখ্যমন্ত্রীর পর পাল্টা চিঠি শুভেন্দুর, ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি–অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার দাবি কমিশনে

শুভেন্দুর অভিযোগ, অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দল বহু দিন ধরে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার বানিয়ে’ নির্বাচনী স্বার্থসিদ্ধি করেছে।
 
মুখ্যমন্ত্রীর পর পাল্টা চিঠি শুভেন্দুর, ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি–অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার দাবি কমিশনে

কলকাতা : রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির পর এবার নির্বাচন কমিশনে পাল্টা চিঠি পাঠালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতার লেখা চিঠি “কোনও গঠনমূলক কারণ নয়, অবৈধ ভোটব্যাঙ্ককে সুরক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টা” — এমন অভিযোগই কমিশনের দরবারে জানিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেন, চলমান এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিএলও-দের উপর ‘অযৌক্তিক চাপ’ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, জোরজবরদস্তি করে নাম বাদ দেওয়া বা সংশোধনের চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তৃণমূলের সরকারী কর্মীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কমিশনকে তাই তিনি অনুরোধ করেন, “চলমান এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ করুন। কারও উপরে জবরদস্তি বন্ধ করুন। যথাযথ প্রশিক্ষণ দিন।”

মমতার চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই পাল্টা সুরে চিঠি লেখেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দল বহু দিন ধরে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার বানিয়ে’ নির্বাচনী স্বার্থসিদ্ধি করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশিদের ঘর ছাড়ার হিড়িক দেখা যাচ্ছে। হাকিমপুর সীমান্তের ভিড়ের ছবি এবং তথ্যও তিনি কমিশনের কাছে তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্য, মমতার চিঠি আসলে নির্বাচন কমিশনের উপর জনগণের আস্থাকে আঘাত করার চেষ্টা।

বিরোধী দলনেতা নিজের চিঠিতে আরও দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার বিএলওদের হুমকি দিয়েছেন। মুকুল রায়ের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত মামলার উদাহরণও টেনে এনেছেন তিনি। শুভেন্দুর অভিযোগ, শাসক দলের লক্ষ্য স্পষ্ট—ভোটের রাজনীতিতে সুবিধা পেতেই অবৈধ ভোটারদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, জলপাইগুড়ির মালবাজারে এক বিএলওর আত্মহত্যা, কোন্নগরে এসআইআর-এর ফর্ম বিতরণের সময় তপতী বিশ্বাস নামে এক বিএলওর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া—এই দুটি ঘটনা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর চিকিৎসকেরা জানান তপতীর সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে, শরীরের বাম দিক কার্যত নিস্তেজ। একই দিনে আরও এক বিএলও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই ঘটনাগুলির পরই মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পাঠানো হয় কমিশনে।

রাজ্যের রাজনীতিতে এখন দুই চিঠির সংঘাত নতুন উত্তাপ তৈরি করেছে। ভোটার তালিকা সংশোধন, বিএলও-দের নিরাপত্তা, অনুপ্রবেশের অভিযোগ—এই সবকিছু দিয়েই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়েছে শাসক ও বিরোধী শিবির। এখন নজর নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের দিকে—কোন ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয় এবং আগামী দিনে এসআইআর প্রক্রিয়ার গতি কোন পথে মোড় নেয়, সেটাই দেখার।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন