SIR : পাঁচ প্রশ্ন নিয়ে কমিশনে তৃণমূল, মিলল না জবাব, দাবি প্রতিনিধি দলের

তৃণমূলের দাবি, এসআইআর প্রক্রিয়ার ‘চাপে’ ৪১ জনের মৃত্যুর দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।

তৃণমূলের সাফ দাবি, এসআইআর প্রক্রিয়ার ‘চাপে’ ৪১ জনের মৃত্যুর দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
ফটো : এআইআর
নয়াদিল্লি : বাংলায় চলমান এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ আরও বাড়াল তৃণমূল কংগ্রেস। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই শুক্রবার দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ প্রতিনিধিদল সরাসরি পাঁচটি প্রশ্ন তোলে এবং অভিযোগ করে, কোনও প্রশ্নেরই সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি কমিশন। তৃণমূলের দাবি, এসআইআর প্রক্রিয়ার ‘চাপে’ ৪১ জনের মৃত্যুর দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।

শুক্রবার সকাল এগারোটায় নির্বাচন সদনে কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন তৃণমূলের দশ সাংসদ। ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, দোলা সেন, মহুয়া মৈত্র, প্রকাশ চিক বরাইক, সাজদা আহমেদ, মমতাবালা ঠাকুর, প্রতিমা মণ্ডল এবং সাকেত গোখলে। বৈঠক শেষে ক্ষোভ ঝরিয়ে ডেরেক জানান, কমিশন তাঁদের প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দেয়নি। তাঁর অভিযোগ, এসআইআরের কারণে রাজ্যে যে মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তার রক্ত ‘মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের হাতেই লেগে রয়েছে।’ শতাব্দী রায় ও মহুয়া মৈত্রও প্রশ্ন তোলেন—এসআইআর-জনিত এই মৃত্যু ও হয়রানির দায় কি কমিশন নেবে না?

শতাব্দী রায়ের বক্তব্য, এসআইআর কি অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে? যদি তাই হয়, তবে কেন বাংলায় বাঙালিদের লক্ষ্য করে হয়রানি? কেন সারা দেশে বাঙালিদের উপর হামলা বাড়ছে? মিজোরাম বা ত্রিপুরায় এসআইআর চালু হচ্ছে না কেন? অবৈধ ভোটার ছাঁটাইয়ের কথা বলা হচ্ছে—তাহলে সেই অবৈধ ভোটারদের দ্বারাই নির্বাচিত মোদি সরকারের বৈধতা কোথায়? তাঁর দাবি, এসআইআরের জেরে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, এই মৃত্যুর দায় কমিশনের কি নয়? মৃতদের পরিবারের জন্য কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে? বিজেপি এক কোটি ভোটার বাদ দেওয়ার কথা বলছে—কমিশন এ বিষয়ে নীরব কেন?

সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই ডেরেক সরাসরি কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে বলেন, “আপনার হাতে মানুষের রক্ত লেগে রয়েছে।” শতাব্দী রায় যখন এসআইআর-কেন্দ্রিক মৃত্যুর তালিকা তাঁর হাতে তুলে দেন, তখন কমিশনারের মুখে হাসি দেখা যায়। ডেরেক তখনই তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন, “মুখ থেকে হাসি সরান, এত মানুষের প্রাণহানি—এটা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়।” শতাব্দীর দেওয়া তালিকায় ৬০ জনের মৃত্যুর উল্লেখ রয়েছে—এর মধ্যে ৪১ জন সাধারণ নাগরিক এবং ১৯ জন বিএলও। তালিকা দেখে হতবাক জ্ঞানেশ কুমার দাবি করেন—“আমি জানতাম না।”

বৈঠকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির উত্তর না দেওয়ার জন্য কমিশনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা চিঠি লিখলে আপনি উত্তর দেন না। কিন্তু চিঠি কার কাছ থেকে আসছে সেটা দেখবেন—তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী আপনাকে চিঠি লিখেছেন, আপনি তাতেও উত্তর দিচ্ছেন না।” মমতাবালা ঠাকুর মতুয়া সমাজের নথি-সংক্রান্ত সমস্যার কথা তুলে ধরে আধারকে বৈধ নথি হিসেবে মান্যতার দাবি জানান। প্রতিমা মণ্ডল তুলে ধরেন এসআইআর প্রক্রিয়ার প্রযুক্তিগত ত্রুটি।

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, আগের দিন রাতে মুখ্যমন্ত্রী সাংসদদের সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ বৈঠক করে কৌশল ঠিক করে দেন। শুক্রবার সকালে দিল্লিতে তৃণমূল দপ্তরে সাংসদরা সেই নির্দেশ অনুযায়ী প্রস্তুতি নেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই দশ জনের প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়। কমিশন যদিও মাত্র পাঁচ জনকে বৈঠকের অনুমতি দিয়েছিল, তবু তৃণমূল দশ জন সাংসদ নিয়েই উপস্থিত হয়। অনুমতি না পেলে নির্বাচন সদনের ভিতরেই ধরনায় বসার প্রস্তুতিও ছিল। পোস্টার-ব্যানারও তৈরি রাখা হয়েছিল, যেগুলি পরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তুলে ধরা হবে।

বৈঠকে তৃণমূল স্পষ্ট জানায়, এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের আপত্তি নেই—আপত্তি রয়েছে এর অপরিকল্পিত এবং তড়িঘড়ি বাস্তবায়নে। বর্ষা-পরবর্তী কৃষিকাজে ব্যস্ত কৃষিশ্রমিকদের কথা না ভেবে এই সময়ে এসআইআর চালানো ‘অমানবিক’, এমন অভিযোগও তোলেন সাংসদরা।

প্রায় দু’ঘণ্টার আলোচনা শেষে তৃণমূলের দাবি, কমিশন কোনও প্রশ্নেরই স্পষ্ট উত্তর দেয়নি। পরে রাতে কমিশন ‘সূত্র মারফত’ যে কয়েকটি বক্তব্য প্রকাশ করে—যেমন ৯ ডিসেম্বরের পর খসড়া তালিকা নিয়ে দাবি জানানো যাবে, রাজ্য কর্মীদের উপর কোনও রাজনৈতিক চাপ চলবে না, বিএলওদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—এসব নিয়েও প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। ডেরেকের অভিযোগ, “এই কথাগুলির কোনওটিই বৈঠকে বলা হয়নি।” এসআইআর নিয়ে প্রধান প্রশ্নগুলির কোনও বাস্তবসম্মত জবাবই কমিশন দেয়নি বলেই অভিযোগ তৃণমূলের।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন