প্রশাসনিক সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন, নারীসংরক্ষণ এবং শিল্পায়নের মতো দপ্তরগুলিতে নিজের ঘনিষ্ঠদের রেখে নীতীশ নিশ্চিত করলেন যে রাজ্যের মূল নীতি-দিকনির্দেশ তাঁর হাতেই থাকবে।
বিহারের রাজনীতিতে ফের হিসেব–নিকেশের নতুন খেল। নির্বাচনে এনডিএ-র ঐতিহাসিক জয়ের পর দশমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসা নীতীশ কুমার প্রত্যাশামতোই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কিন্তু এই মন্ত্রিসভা শুধু প্রশাসনিক কাঠামোর রদবদল নয়—এর ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে আগামী পাঁচ বছরের রাজনৈতিক দিকনির্দেশ, জাতপাতের হিসেব, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ভারসাম্য, জোটসঙ্গীদের খুশি রাখা এবং বিরোধী রাজনৈতিক প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল। তাই বলা যেতে পারে, নয়া মন্ত্রিসভা বিহারের ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগার।
এবারের ভোটে একা জেডিইউ নয়, বিজেপির উত্থানও এই সরকার গঠনের রাজনীতিকে জটিল করেছে। বিজেপি বিহারের গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে অঞ্চলে অপ্রত্যাশিতভাবে শক্তিশালী ফল করেছে। ফলে মন্ত্রিসভায় তাদের দাবি স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিজেপির সেই ‘অদৃশ্য টানাপোড়েন’ এবার আরও স্পষ্ট। জেডিইউ চায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক ন্যায়ের নামে তার ঐতিহ্যবাহী জনভিত্তিকে ধরে রাখতে, অন্যদিকে বিজেপি চায় তার নতুন রাজনৈতিক বিস্তারকে কাজে লাগিয়ে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দফতর দখল করতে। এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই নীতীশের জন্য সবচেয়ে কঠিন।
মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে নীতীশের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল—কোন সামাজিক গোষ্ঠীকে কতটা প্রতিনিধিত্ব দেওয়া হবে। বিহারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সমীকরণে ইওবিসি, মহাদলিত, অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা জাতিগোষ্ঠী এবং মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক—সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নীতীশ বুঝেছেন, তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব মূলত দাঁড়িয়ে আছে সামাজিক ন্যায় এবং উন্নয়নমুখী শাসনের উপর। তাই তিনি নতুন মন্ত্রিসভায় চেষ্টা করেছেন প্রতিটি জাতপাতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে। মহাদলিত সমাজ থেকে শুরু করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়োগ—সবই সেই হিসেবের অংশ। তাঁর এই ‘সামাজিক ভারসাম্যনীতি’ই তাঁকে এতদিন বিহারের রাজনীতিতে একটি অনন্য জায়গায় রেখেছে। তবে এই সমীকরণ শুধু সামাজিক গণিত নয়। এর পিছনে রয়েছে একটি কঠিন রাজনৈতিক কৌশলও। নির্বাচন ফল ঘোষণার পর যেভাবে রাষ্ট্রীয় জনতা দল পরিবারতন্ত্র ও অন্দরকলহে জর্জরিত হয়েছে, নীতীশ তা গভীরভাবে লক্ষ করেছেন। আরজেডি যেভাবে দ্রুত শক্তিক্ষয় করছে, সেখানেই নীতীশের নতুন মন্ত্রিসভার মাধ্যমে বিরোধী শিবিরে আরও চাপ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম ও পেছিয়ে থাকা জাতির ভোটারদের দিকে হাত বাড়ানো—নীতীশের জন্য একটি প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক বার্তা। তিনি বোঝাতে চাইছেন, আরজেডির ‘সামাজিক ন্যায়’-এর পুরনো মডেল এখন পুরোনো, তাঁর নেতৃত্বেই বিহারে নয়া সামাজিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।
এই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার সময় সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা ছিল বিজেপির দাবি অনুযায়ী ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রশ্ন। যদিও প্রকাশ্যে বিজেপি এই দাবি অস্বীকার করছে, কিন্তু রাজনৈতিক মহল জানে—দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরেই বিহারে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাইছে। নীতীশ কুমার তাই আপাতত কৌশলে বিজেপিকে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর দিলেও নিজের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুকে আগলে রেখেছেন। প্রশাসনিক সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন, নারীসংরক্ষণ, এবং শিল্পায়নের মতো দপ্তরগুলির ক্ষেত্রে তিনি নিজের ঘনিষ্ঠদের রেখে নিশ্চিত করেছেন যে রাজ্যের মূল নীতি-দিকনির্দেশ তাঁর হাতেই থাকবে।
অন্যদিকে বিজেপিও এমন মন্ত্রিসভা ভাগ চায় যা ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিহারকে ‘মডেল রাজ্য’ হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। আইনশৃঙ্খলা, সড়ক নির্মাণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা—এই দপ্তরগুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির নেতারা মনে করেন, এই ক্ষেত্রগুলিতে দৃশ্যমান উন্নতি ঘটাতে পারলে বিহারে তারা দীর্ঘমেয়াদে একক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
নীতীশের নয়া মন্ত্রিসভায় তাঁর পুরনো সহযোগীদের প্রত্যাবর্তনও একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা। গত কয়েক বছরের ওঠানামার পর তিনি আবারও ‘স্থিতিশীল নীতীশ’-এর ছাঁচে ফিরছেন। জোটসঙ্গীদের সঙ্গে স্থায়ী সমঝোতা, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই তিনি নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি পুনর্নির্মাণ করতে চাইছেন।
বিহারের ভোটাররা গত কয়েক বছরে বহু রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছেন—জোটভাঙা, সরকারবদল, নেতৃত্ববদল। সেই ক্লান্তির প্রেক্ষিতে নীতীশের নতুন মন্ত্রিসভা তাঁদের কাছে কতটা ‘বিশ্বাসযোগ্য শাসন’-এর প্রতীক হয়ে উঠবে, তা আগামী কয়েক মাসেই স্পষ্ট হবে। নীতীশ কুমার জানেন, তাঁর রাজনৈতিক সময় এখন সীমিত। তাই তাঁর প্রশাসনকে নতুন করে প্রমাণ করতে হবে যে উন্নয়নমূলক শাসনকাঠামোই বিহারের ভবিষ্যৎ।
![]() |
| পাটনার গান্ধী ময়দানে শপথগ্রহণ অনু্ষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার। প্রধানমন্ত্রীর ‘এক্স’ হ্যান্ডল। |
বিহারের রাজনীতিতে ফের হিসেব–নিকেশের নতুন খেল। নির্বাচনে এনডিএ-র ঐতিহাসিক জয়ের পর দশমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসা নীতীশ কুমার প্রত্যাশামতোই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কিন্তু এই মন্ত্রিসভা শুধু প্রশাসনিক কাঠামোর রদবদল নয়—এর ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে আগামী পাঁচ বছরের রাজনৈতিক দিকনির্দেশ, জাতপাতের হিসেব, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ভারসাম্য, জোটসঙ্গীদের খুশি রাখা এবং বিরোধী রাজনৈতিক প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল। তাই বলা যেতে পারে, নয়া মন্ত্রিসভা বিহারের ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগার।
এবারের ভোটে একা জেডিইউ নয়, বিজেপির উত্থানও এই সরকার গঠনের রাজনীতিকে জটিল করেছে। বিজেপি বিহারের গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে অঞ্চলে অপ্রত্যাশিতভাবে শক্তিশালী ফল করেছে। ফলে মন্ত্রিসভায় তাদের দাবি স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিজেপির সেই ‘অদৃশ্য টানাপোড়েন’ এবার আরও স্পষ্ট। জেডিইউ চায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক ন্যায়ের নামে তার ঐতিহ্যবাহী জনভিত্তিকে ধরে রাখতে, অন্যদিকে বিজেপি চায় তার নতুন রাজনৈতিক বিস্তারকে কাজে লাগিয়ে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দফতর দখল করতে। এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই নীতীশের জন্য সবচেয়ে কঠিন।
মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে নীতীশের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল—কোন সামাজিক গোষ্ঠীকে কতটা প্রতিনিধিত্ব দেওয়া হবে। বিহারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সমীকরণে ইওবিসি, মহাদলিত, অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা জাতিগোষ্ঠী এবং মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক—সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নীতীশ বুঝেছেন, তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব মূলত দাঁড়িয়ে আছে সামাজিক ন্যায় এবং উন্নয়নমুখী শাসনের উপর। তাই তিনি নতুন মন্ত্রিসভায় চেষ্টা করেছেন প্রতিটি জাতপাতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে। মহাদলিত সমাজ থেকে শুরু করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়োগ—সবই সেই হিসেবের অংশ। তাঁর এই ‘সামাজিক ভারসাম্যনীতি’ই তাঁকে এতদিন বিহারের রাজনীতিতে একটি অনন্য জায়গায় রেখেছে। তবে এই সমীকরণ শুধু সামাজিক গণিত নয়। এর পিছনে রয়েছে একটি কঠিন রাজনৈতিক কৌশলও। নির্বাচন ফল ঘোষণার পর যেভাবে রাষ্ট্রীয় জনতা দল পরিবারতন্ত্র ও অন্দরকলহে জর্জরিত হয়েছে, নীতীশ তা গভীরভাবে লক্ষ করেছেন। আরজেডি যেভাবে দ্রুত শক্তিক্ষয় করছে, সেখানেই নীতীশের নতুন মন্ত্রিসভার মাধ্যমে বিরোধী শিবিরে আরও চাপ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম ও পেছিয়ে থাকা জাতির ভোটারদের দিকে হাত বাড়ানো—নীতীশের জন্য একটি প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক বার্তা। তিনি বোঝাতে চাইছেন, আরজেডির ‘সামাজিক ন্যায়’-এর পুরনো মডেল এখন পুরোনো, তাঁর নেতৃত্বেই বিহারে নয়া সামাজিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।
এই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার সময় সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা ছিল বিজেপির দাবি অনুযায়ী ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রশ্ন। যদিও প্রকাশ্যে বিজেপি এই দাবি অস্বীকার করছে, কিন্তু রাজনৈতিক মহল জানে—দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরেই বিহারে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাইছে। নীতীশ কুমার তাই আপাতত কৌশলে বিজেপিকে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর দিলেও নিজের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুকে আগলে রেখেছেন। প্রশাসনিক সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন, নারীসংরক্ষণ, এবং শিল্পায়নের মতো দপ্তরগুলির ক্ষেত্রে তিনি নিজের ঘনিষ্ঠদের রেখে নিশ্চিত করেছেন যে রাজ্যের মূল নীতি-দিকনির্দেশ তাঁর হাতেই থাকবে।
অন্যদিকে বিজেপিও এমন মন্ত্রিসভা ভাগ চায় যা ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিহারকে ‘মডেল রাজ্য’ হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। আইনশৃঙ্খলা, সড়ক নির্মাণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা—এই দপ্তরগুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির নেতারা মনে করেন, এই ক্ষেত্রগুলিতে দৃশ্যমান উন্নতি ঘটাতে পারলে বিহারে তারা দীর্ঘমেয়াদে একক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
নীতীশের নয়া মন্ত্রিসভায় তাঁর পুরনো সহযোগীদের প্রত্যাবর্তনও একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা। গত কয়েক বছরের ওঠানামার পর তিনি আবারও ‘স্থিতিশীল নীতীশ’-এর ছাঁচে ফিরছেন। জোটসঙ্গীদের সঙ্গে স্থায়ী সমঝোতা, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই তিনি নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি পুনর্নির্মাণ করতে চাইছেন।
বিহারের ভোটাররা গত কয়েক বছরে বহু রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছেন—জোটভাঙা, সরকারবদল, নেতৃত্ববদল। সেই ক্লান্তির প্রেক্ষিতে নীতীশের নতুন মন্ত্রিসভা তাঁদের কাছে কতটা ‘বিশ্বাসযোগ্য শাসন’-এর প্রতীক হয়ে উঠবে, তা আগামী কয়েক মাসেই স্পষ্ট হবে। নীতীশ কুমার জানেন, তাঁর রাজনৈতিক সময় এখন সীমিত। তাই তাঁর প্রশাসনকে নতুন করে প্রমাণ করতে হবে যে উন্নয়নমূলক শাসনকাঠামোই বিহারের ভবিষ্যৎ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন