‘চুনাভ চোরি’ করেই মোদির জয়, প্রমাণ দেব জেন জেড প্রজন্মকে: রাহুল গান্ধী

ভারতের সংবিধানে লেখা আছে—‘ওয়ান ম্যান, ওয়ান ভোট’। কিন্তু হরিয়ানায় হয়েছে ‘ওয়ান ম্যান, মাল্টিপল ভোট’, মন্তব্য রাহুলের। 

চুনাভ চোরি’ করেই মোদির জয়, প্রমাণ দেব জেন জেড প্রজন্মকে: রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী। ফাইল ছবি।
নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছেন—এই অভিযোগ আরও একবার জোর গলায় তুললেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, “আমাদের কাছে প্রচুর প্রমাণ আছে। আমরা প্রজন্ম জেড-সহ দেশের তরুণদের দেখাবো যে নরেন্দ্র মোদি ‘চুনাভ চোরি’র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বিজেপি পদ্ধতিগতভাবে ভোট চুরি করছে—এটা আমরা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরব।”

রাহুলের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি তাঁর অভিযোগকে “নির্লজ্জ মিথ্যে” বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপি মুখপাত্র প্রদীপ ভণ্ডারি রাহুলকে 'ভারতীয় সংবিধানের জন্য বিপদ' আখ্যা দিয়ে বলেন, “রাহুল গান্ধী ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যে ছড়িয়ে গণতন্ত্রকে দুর্বল করছেন।”

গত বছর হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে ভয়াবহ ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনেছিলেন রাহুল। তাঁর দাবি, মোট দুই কোটির মধ্যে ২৫ লক্ষ ভোট চুরি হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় প্রতি আট জন ভোটারের মধ্যে একজন ভুয়ো। একাধিক ভুয়ো নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভোট দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছেন, এক ব্রাজিলিয়ান মডেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে অন্তত ২২ বার বিভিন্ন ভোটার তালিকায়।

রাহুলের কথায়, “আমি প্রমাণসহ দেখিয়েছি—হরিয়ানার নির্বাচন আসলে নির্বাচনই ছিল না, ওটা ছিল ‘হোলসেল চুরি’। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আমার অভিযোগের কোনও উত্তর দেয়নি। বিজেপি সেটা অস্বীকারও করছে না, বরং প্রতিরক্ষা করছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতের সংবিধানে লেখা আছে—‘ওয়ান ম্যান, ওয়ান ভোট’। কিন্তু হরিয়ানায় হয়েছে ‘ওয়ান ম্যান, মাল্টিপল ভোট’। মোদি-শাহ জুটি এবং ইসি মিলে সংবিধানের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। একই ঘটনা ঘটবে বিহারেও। ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা ও গুজরাতে ভোট চুরির নজির।”

এদিকে, এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে 'ব্রাজিলিয়ান অ্যাঞ্জেল'। যাঁর ছবিকে রাহুল ভোট জালিয়াতির প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছেন, সেই তরুণী লারিসা নেরি আসলে ব্রাজিলের এক হেয়ারড্রেসার। আট বছর আগে মাত্র ২০ বছর বয়সে এক ফটোগ্রাফার বন্ধুর অনুরোধে তিনি কিছু ছবি তুলেছিলেন। পরে সেই ছবিই ভারতের ভোটার তালিকায় ব্যবহৃত হচ্ছে দেখে তিনি বিস্মিত।

লারিসা এনডিটিভিকে বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ মজা করছে। কিন্তু পরে যখন বুঝলাম, আমার ছবি নিয়ে কোনও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, আমি ভয় পেয়ে যাই। আমি জানি না, মানুষ আমার ছবির সঙ্গে কী করছে বা কীভাবে ব্যবহার করছে। ভাষাটা বুঝি না বলেই এই সব মিম বা ভিডিওর মানে ধরতে পারছি না।”

রাহুলের নতুন এই ‘চুনাভ চোরি’ তত্ত্বে রাজনৈতিক মহল উত্তাল। বিজেপি একে 'হতাশা থেকে জন্ম নেওয়া মিথ্যা প্রচার' বলে কটাক্ষ করলেও, কংগ্রেস নেতার বক্তব্যে নতুন করে উষ্ণতা পেয়েছে ভোট জালিয়াতি ইস্যু। বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে রাহুল যে ‘চুরি হওয়া গণতন্ত্র’-এর বার্তা ছড়াতে চাইছেন, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন