'আশির দশকের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় ভারত ও ইজরায়েলের যৌথ হামলার পরিকল্পনা করেছিল।'
![]() |
| রিচার্ড বারলো |
নয়াদিল্লি : আশির দশকেই দক্ষিণ এশিয়ার অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত যদি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ‘সাহস’ দেখাতেন। বলছেন প্রাক্তন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ–এর আধিকারিক রিচার্ড বারলো। তিনি সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, জানিয়েছেন, আশির দশকের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় ভারত ও ইজরায়েলের যৌথ হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা কার্যকর না হওয়াটা ছিল ‘একটি বড় দুঃখজনক বিষয়’। তাঁর দাবি, যদি সে সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই অভিযানে অনুমোদন দিতেন, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার বহু সমস্যা আগেভাগেই মিটে যেতে পারত।
সংবাদ সংস্থা এএনআই–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বারলো বলেন, “আমি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত সরকারি পদে ছিলাম না। ওই সময়েই সম্ভবত ঘটনাটা ঘটেছিল। পরে এ নিয়ে শুনেছিলাম। কিন্তু যেহেতু সেটা কখনও বাস্তবায়িত হয়নি, তাই তেমনভাবে জড়াতে পারিনি। সত্যি বলতে, ইন্দিরা গান্ধী অনুমোদন না দেওয়াটা দুঃখের, কারণ এতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।”
ডিক্লাসিফাইড নথি ও বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারত ও ইজরায়েল মিলিতভাবে পাকিস্তানের কাহুটা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র— যা ছিল ইসলামাবাদের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র— সেখানে বিমান হামলার পরিকল্পনা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোতে বাধা দেওয়া এবং বিশেষত ইরানের মতো দেশে প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়া রোধ করা।
বারলো আশির দশকে পাকিস্তানের গোপন পারমাণবিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করতেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগনের আমলে আমেরিকা এমন কোনও হামলার ঘোরতর বিরোধিতা করত। বিশেষত ইজরায়েল যুক্ত থাকলে আমেরিকার আফগানিস্তানে গোপন অভিযানের ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। তাঁর কথায়, “আমার মনে হয়, রেগন তখন ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনের উপর ভীষণ রেগে যেতেন যদি এমন কিছু ঘটত। কারণ, এতে আফগান অভিযানই বিঘ্নিত হতো।”
বারলো আরও বলেন, পাকিস্তান সে সময় আফগানিস্তানে মার্কিন সহযোগিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল নিজের পারমাণবিক কর্মসূচিকে রক্ষা করার জন্য। পাকিস্তানের পরমাণু কমিশনের প্রধান মুনির আহমদ খান মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সতর্ক করেছিলেন— যদি গোপন সহায়তা বন্ধ হয়, তাহলে আফগান মুজাহিদিনদের আর সমর্থন দেওয়া হবে না। বারলোর ভাষায়, “মুনির খান কার্যত গোপন সাহায্য প্রবাহকে ব্ল্যাকমেলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছিলেন।”
উল্লেখ্য, কাহুটা প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন পাকিস্তানের বিজ্ঞানী এ কিউ খান, যিনি পরে বিশ্বের অন্যতম বিতর্কিত পরমাণু অস্ত্র বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর হাত ধরেই পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষায় সফল হয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা ঘটে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন