ছয় দশকেরও বেশি সময় জুড়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুধু নায়কোচিত ইমেজের নয়, বরং আবেগ, সংবেদনশীলতা ও মানবিকতার এক অনন্য মিশেল। লিখছেন রাজ।
...চমৎকারটি ঘটল কিন্তু ১৯৭৫-এ। ব্যাক-টু-ব্যাক দু’টি ছবি মুক্ত পেল। একটি রমেশ সিপ্পির কালাজয়ী অ্যাকশন মুভি ‘শোলে’, দ্বিতীয়টি ঋষিকেশ মুখার্জির রোমান্টিক-কমেডি ‘চুপকে চুপকে’। দুটি একেবারেই ভিন্নধর্মী ছবি। দু’টিতেই ভিন্ন চরিত্রে ধর্মেন্দ্র। একটিতে অ্যাকশন হিরো, অন্যটিতে রোমান্টিক হিরো। চুপকে চুপকে-র প্রফেসর পরিমল ত্রিপাঠিকে আমরা অনেক আগে থেকেই চিনি। কিন্তু শোলে-র বীরু আমাদের অদেখা। ধর্মেন্দ্রকে অ্যাকশনে আমরা আগেও দেখেছি– ফুল আউর পাত্থরে... কিন্তু শোলে-তে তৈরি হল ইতিহাস।
চলে গেলেন বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হি-ম্যান ধর্মেন্দ্র । বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন। পরিবার জানিয়েছিল, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। কিন্তু সোমবার এল দুঃসংবাদ। চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
ছয় দশকেরও বেশি সময় জুড়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুধু নায়কোচিত ইমেজের নয়, বরং আবেগ, সংবেদনশীলতা ও মানবিকতার এক অনন্য মিশেল। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র দুনিয়া হারাল এক ট্রেন্ড-সেটার হিরোকে, আর দর্শক হারাল পর্দার সেই সহজ-সরল মানুষটিকে, যিনি অ্যাকশন-ইমোশনের দুর্লভ সমন্বয় ছিলেন।
১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর লুধিয়ানার নসরালি গ্রামে এক সাধারণ পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম ধর্মেন্দ্রর। স্কুলশিক্ষক বাবা কেওয়াল কিশন সিং দেওল এবং মা সতবন্ত কৌর। গ্রামের মাঠ-খামারই হয়তো তাঁর ভবিতব্য ছিল । অভিনয় তখনও তাঁর জীবনের স্বপ্ন নয়। কিন্তু ভাগ্যের মোড় ঘুরে গেল ১৯৫৮ সালে। ফিল্মফেয়ার-এ আয়োজিত ‘নিউ ফেসেস’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন তিনি। হাতে তেমন সঞ্চয় ছিল না, ছিল শুধু স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের টানে বম্বের ট্রেনে চেপে বসেন তরুণ ধরম। জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
তবে পথ সহজ ছিল না। স্টুডিও থেকে স্টুডিও ঘোরা, খালি পেটে দিন কাটানো—এইসবই ছিল প্রথম জীবনের সংগ্রাম। অবশেষে ১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ ছবিতে সুযোগ এল। যদিও সে ছবি ব্যবসা করেনি, কিন্তু ধর্মেন্দ্র চোখের গভীরতা নজরে পড়ে সমালোচকদের। ১৯৬৩-এ বিমল রয়ের ‘বন্দিনী’ তাঁকে এনে দেয় সত্যিকারের পরিচিতি—নূতনের বিপরীতে সংবেদনশীল চিকিৎসকের চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্থান করে নেয়।
মধ্য ষাটের দশকেই তিনি হয়ে ওঠেন ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির নায়ক। ‘অনুপমা’, ‘আয়ে দিন বাহার কে’ থেকে ‘ফুল ঔর পাথর’—প্রতিটি ছবিতে তাঁর উপস্থিতি নতুন মাইল স্থাপন করেছিল। ‘ফুল আউর পাত্থর’-এ অচেতন মীনা কুমারিকে কোলে নিয়ে দাঁড়ানো ধর্মেন্দ্রর খোলা বুকের দৃশ্য তাঁকে দেয় ‘হি-ম্যান’-এর তকমা। কিন্তু, সেটিই তাঁর একমাত্র ইমেজ নয়,– নিজের অভিনয়ে কোমলতা, সততা আর সহজ-সরল আবেগকে সমান জায়গা দিয়েছিলেন তিনি।
সত্তরের দশক ছিল ধর্মেন্দ্রর সোনালি যুগ। একদিকে ‘সত্যকাম’-এর আদর্শবাদী চরিত্র—যা সমালোচকদের মতে তাঁর সেরা অভিনয়—অন্যদিকে ‘জুগনু’, ‘রাজা জানি’ বা ‘চুপকে চুপকে’-র মতো হিট ছবি। তবে যা তাঁকে অমর করে—তা হল ১৯৭৫-এর ‘শোলে’। বীরু চরিত্রে ধর্মেন্দ্রর হাস্যরস, উচ্ছ্বাস, আর জয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব আজ যেন ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ। ‘বাসন্তী, ইন কুত্তোঁ কে সামনে মাত নাচনা’ সংলাপ এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও কম আলোচিত নয়। ‘তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান’ ছবির সেটে হেমা মালিনীর সঙ্গে পরিচয় থেকে শুরু হয় এক কিংবদন্তি প্রেমকাহিনি। নানা বিতর্ক ও সামাজিক বাধা উপেক্ষা করে ১৯৮০-এ তাঁদের বিয়ে। হেমাকে নিয়ে ধর্মেন্দ্রর জীবনে তৈরি হয় পরিপূর্ণতার আরেক ছবি। এর আগে ১৯৫৪-এ প্রকাশ কৌরকে বিয়ে করেন। তাঁদের চার সন্তান—সানি, ববি, অজিতা ও বিজেতা। হেমার সঙ্গে দুই কন্যা—ঈশা ও অহনা। জটিল পরিবারিক পরিস্থিতির মধ্যেও সন্তানেরা সকলেই তাঁর প্রতি ছিলেন সমান যত্নের।
‘হি-ম্যান’-এর পেছনে ছিল এক কাব্যিক মন। ধর্মেন্দ্র লিখতেন কবিতা। হিন্দি ও পাঞ্জাবিতে। যেখানে ফুটে উঠত তাঁর নিঃসঙ্গতা, ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা। তাঁর কাব্যসংগ্রহ ‘দিলকাশ’ প্রমাণ করেছে, শক্তিমান নায়কের বুকে লুকিয়ে ছিল এক গভীর সংবেদনশীল হৃদয়।
২০০৪ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। বিজেপির প্রার্থী হিসেবে বিকানের থেকে লোকসভা ভোটে জয়ী হলেও পরে স্বীকার করেন, রাজনীতির কঠোর বাস্তব তাঁর জন্য নয়। তিনি ছিলেন সিনেমার মানুষ। স্টুডিওর আলো-আঁধারিতেই তাঁর প্রাণ।
বয়সের ভারেও থেমে যাননি। ‘আপনে’, ‘যমলা পাগলা দিওয়ানা’ সিরিজে ছেলে সানি-ববির সঙ্গে অভিনয় করে দর্শককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পুরনো দিনের সে আবেগ। ২০২৩-এ ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’-তে করণ জোহরের পরিচালনায় কানওয়াল লুন্ড চরিত্রে অভিনয় তাঁর শেষ উজ্জ্বল ছাপ। কোমল, হৃদয়ছোঁয়া, চিরসবুজ।
তিনশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন ধর্মেন্দ্র। ১৯৯৭-এ ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১২-তে পদ্মভূষণ তাঁর বিশাল অবদানের সরকারি স্বীকৃতি। তবে তাঁর নিজের কথায়, “আমি শুধু মানুষের হৃদয়ে বাঁচতে চাই।”
গত মাসখানেক স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হয়। ২০২২-এ পিঠের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন, পরে বাড়ি ফিরে ভক্তদের শুভেচ্ছার উত্তর দেন হাসিমুখে। লোনাভালার ফার্মহাউসেই কাটত অধিকাংশ সময়—গাছ, পশুপাখি আর স্মৃতির সঙ্গেই ছিলেন। ভক্তদের চা খাওয়ানো বা ছোটদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটানো—এই সরলতাই তাঁকে করেছিল আলাদা।
মৃত্যুর খবর ছড়াতেই দেশজুড়ে শোকের ছায়া। অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, “ধরমজি শুধু অভিনেতা নন, আমাদের যৌবনের অংশ।” হেমা মালিনী লেখেন, “ওই ছিল আমার দুনিয়া।” সহ-অভিনেতা, নবীন তারকা—সবাই তাঁকে স্মরণ করলেন একজন বিনম্র, হৃদয়বান, আলোকোজ্জ্বল মানুষ হিসেবে।
ধর্মেন্দ্রর উত্তরাধিকার শুধু তাঁর চলচ্চিত্র নয়, তাঁর মানবিকতা। তিনি দেখিয়েছেন, পুরুষত্ব মানে শক্তি নয়, সংবেদনশীলতারও সাহস। ভারতের লক্ষ লক্ষ দর্শক আজও তাঁর হাসি, তাঁর সংলাপ, তাঁর সহজ-সরল ভালবাসাকে নিজের বলে মানে।
...চমৎকারটি ঘটল কিন্তু ১৯৭৫-এ। ব্যাক-টু-ব্যাক দু’টি ছবি মুক্ত পেল। একটি রমেশ সিপ্পির কালাজয়ী অ্যাকশন মুভি ‘শোলে’, দ্বিতীয়টি ঋষিকেশ মুখার্জির রোমান্টিক-কমেডি ‘চুপকে চুপকে’। দুটি একেবারেই ভিন্নধর্মী ছবি। দু’টিতেই ভিন্ন চরিত্রে ধর্মেন্দ্র। একটিতে অ্যাকশন হিরো, অন্যটিতে রোমান্টিক হিরো। চুপকে চুপকে-র প্রফেসর পরিমল ত্রিপাঠিকে আমরা অনেক আগে থেকেই চিনি। কিন্তু শোলে-র বীরু আমাদের অদেখা। ধর্মেন্দ্রকে অ্যাকশনে আমরা আগেও দেখেছি– ফুল আউর পাত্থরে... কিন্তু শোলে-তে তৈরি হল ইতিহাস।
চলে গেলেন বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হি-ম্যান ধর্মেন্দ্র । বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন। পরিবার জানিয়েছিল, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। কিন্তু সোমবার এল দুঃসংবাদ। চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
ছয় দশকেরও বেশি সময় জুড়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুধু নায়কোচিত ইমেজের নয়, বরং আবেগ, সংবেদনশীলতা ও মানবিকতার এক অনন্য মিশেল। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র দুনিয়া হারাল এক ট্রেন্ড-সেটার হিরোকে, আর দর্শক হারাল পর্দার সেই সহজ-সরল মানুষটিকে, যিনি অ্যাকশন-ইমোশনের দুর্লভ সমন্বয় ছিলেন।
১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর লুধিয়ানার নসরালি গ্রামে এক সাধারণ পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম ধর্মেন্দ্রর। স্কুলশিক্ষক বাবা কেওয়াল কিশন সিং দেওল এবং মা সতবন্ত কৌর। গ্রামের মাঠ-খামারই হয়তো তাঁর ভবিতব্য ছিল । অভিনয় তখনও তাঁর জীবনের স্বপ্ন নয়। কিন্তু ভাগ্যের মোড় ঘুরে গেল ১৯৫৮ সালে। ফিল্মফেয়ার-এ আয়োজিত ‘নিউ ফেসেস’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন তিনি। হাতে তেমন সঞ্চয় ছিল না, ছিল শুধু স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের টানে বম্বের ট্রেনে চেপে বসেন তরুণ ধরম। জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
তবে পথ সহজ ছিল না। স্টুডিও থেকে স্টুডিও ঘোরা, খালি পেটে দিন কাটানো—এইসবই ছিল প্রথম জীবনের সংগ্রাম। অবশেষে ১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ ছবিতে সুযোগ এল। যদিও সে ছবি ব্যবসা করেনি, কিন্তু ধর্মেন্দ্র চোখের গভীরতা নজরে পড়ে সমালোচকদের। ১৯৬৩-এ বিমল রয়ের ‘বন্দিনী’ তাঁকে এনে দেয় সত্যিকারের পরিচিতি—নূতনের বিপরীতে সংবেদনশীল চিকিৎসকের চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্থান করে নেয়।
মধ্য ষাটের দশকেই তিনি হয়ে ওঠেন ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির নায়ক। ‘অনুপমা’, ‘আয়ে দিন বাহার কে’ থেকে ‘ফুল ঔর পাথর’—প্রতিটি ছবিতে তাঁর উপস্থিতি নতুন মাইল স্থাপন করেছিল। ‘ফুল আউর পাত্থর’-এ অচেতন মীনা কুমারিকে কোলে নিয়ে দাঁড়ানো ধর্মেন্দ্রর খোলা বুকের দৃশ্য তাঁকে দেয় ‘হি-ম্যান’-এর তকমা। কিন্তু, সেটিই তাঁর একমাত্র ইমেজ নয়,– নিজের অভিনয়ে কোমলতা, সততা আর সহজ-সরল আবেগকে সমান জায়গা দিয়েছিলেন তিনি।
সত্তরের দশক ছিল ধর্মেন্দ্রর সোনালি যুগ। একদিকে ‘সত্যকাম’-এর আদর্শবাদী চরিত্র—যা সমালোচকদের মতে তাঁর সেরা অভিনয়—অন্যদিকে ‘জুগনু’, ‘রাজা জানি’ বা ‘চুপকে চুপকে’-র মতো হিট ছবি। তবে যা তাঁকে অমর করে—তা হল ১৯৭৫-এর ‘শোলে’। বীরু চরিত্রে ধর্মেন্দ্রর হাস্যরস, উচ্ছ্বাস, আর জয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব আজ যেন ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ। ‘বাসন্তী, ইন কুত্তোঁ কে সামনে মাত নাচনা’ সংলাপ এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও কম আলোচিত নয়। ‘তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান’ ছবির সেটে হেমা মালিনীর সঙ্গে পরিচয় থেকে শুরু হয় এক কিংবদন্তি প্রেমকাহিনি। নানা বিতর্ক ও সামাজিক বাধা উপেক্ষা করে ১৯৮০-এ তাঁদের বিয়ে। হেমাকে নিয়ে ধর্মেন্দ্রর জীবনে তৈরি হয় পরিপূর্ণতার আরেক ছবি। এর আগে ১৯৫৪-এ প্রকাশ কৌরকে বিয়ে করেন। তাঁদের চার সন্তান—সানি, ববি, অজিতা ও বিজেতা। হেমার সঙ্গে দুই কন্যা—ঈশা ও অহনা। জটিল পরিবারিক পরিস্থিতির মধ্যেও সন্তানেরা সকলেই তাঁর প্রতি ছিলেন সমান যত্নের।
‘হি-ম্যান’-এর পেছনে ছিল এক কাব্যিক মন। ধর্মেন্দ্র লিখতেন কবিতা। হিন্দি ও পাঞ্জাবিতে। যেখানে ফুটে উঠত তাঁর নিঃসঙ্গতা, ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা। তাঁর কাব্যসংগ্রহ ‘দিলকাশ’ প্রমাণ করেছে, শক্তিমান নায়কের বুকে লুকিয়ে ছিল এক গভীর সংবেদনশীল হৃদয়।
২০০৪ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। বিজেপির প্রার্থী হিসেবে বিকানের থেকে লোকসভা ভোটে জয়ী হলেও পরে স্বীকার করেন, রাজনীতির কঠোর বাস্তব তাঁর জন্য নয়। তিনি ছিলেন সিনেমার মানুষ। স্টুডিওর আলো-আঁধারিতেই তাঁর প্রাণ।
বয়সের ভারেও থেমে যাননি। ‘আপনে’, ‘যমলা পাগলা দিওয়ানা’ সিরিজে ছেলে সানি-ববির সঙ্গে অভিনয় করে দর্শককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পুরনো দিনের সে আবেগ। ২০২৩-এ ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’-তে করণ জোহরের পরিচালনায় কানওয়াল লুন্ড চরিত্রে অভিনয় তাঁর শেষ উজ্জ্বল ছাপ। কোমল, হৃদয়ছোঁয়া, চিরসবুজ।
তিনশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন ধর্মেন্দ্র। ১৯৯৭-এ ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১২-তে পদ্মভূষণ তাঁর বিশাল অবদানের সরকারি স্বীকৃতি। তবে তাঁর নিজের কথায়, “আমি শুধু মানুষের হৃদয়ে বাঁচতে চাই।”
গত মাসখানেক স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হয়। ২০২২-এ পিঠের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন, পরে বাড়ি ফিরে ভক্তদের শুভেচ্ছার উত্তর দেন হাসিমুখে। লোনাভালার ফার্মহাউসেই কাটত অধিকাংশ সময়—গাছ, পশুপাখি আর স্মৃতির সঙ্গেই ছিলেন। ভক্তদের চা খাওয়ানো বা ছোটদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটানো—এই সরলতাই তাঁকে করেছিল আলাদা।
মৃত্যুর খবর ছড়াতেই দেশজুড়ে শোকের ছায়া। অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, “ধরমজি শুধু অভিনেতা নন, আমাদের যৌবনের অংশ।” হেমা মালিনী লেখেন, “ওই ছিল আমার দুনিয়া।” সহ-অভিনেতা, নবীন তারকা—সবাই তাঁকে স্মরণ করলেন একজন বিনম্র, হৃদয়বান, আলোকোজ্জ্বল মানুষ হিসেবে।
ধর্মেন্দ্রর উত্তরাধিকার শুধু তাঁর চলচ্চিত্র নয়, তাঁর মানবিকতা। তিনি দেখিয়েছেন, পুরুষত্ব মানে শক্তি নয়, সংবেদনশীলতারও সাহস। ভারতের লক্ষ লক্ষ দর্শক আজও তাঁর হাসি, তাঁর সংলাপ, তাঁর সহজ-সরল ভালবাসাকে নিজের বলে মানে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন