আন্তর্জাতিক আইনে নীতি স্পষ্টভাবে বলা আছে, তা হল রিপ্যাট্রিয়েশন বা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার।
রজত যোগী
বাংলায় এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই বারত ছাড়ার হিড়িক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের। ভারতীয় নথি নেই, তাই থাকা যাবে না, বলছেন নিজেরাই। কেউ দালাল ধরে, কেউ আবার জলপথে এদেশে ঢুকেছেন। কেউ ১৫ বছর আগে, কেউ আবার ২-৩ বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার জন্য সীমান্তে শয়ে শয়ে মানুষের ভিড়।
সীমান্ত-সংলগ্ন অঞ্চলে অনুপ্রবেশ বা অবৈধ ঢুকে আসা বহু দেশেই একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। ভারতও সেই সমস্যার বাইরে নয়। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সীমান্তের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং মানবিক কারণ—বিভিন্ন উপাদান মিলিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে। কিন্তু একজন অনুপ্রবেশকারীকে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো কি শুধুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত? আন্তর্জাতিক আইন ও ভারতের আইনি প্রক্রিয়া এ বিষয়ে কী বলে?
আন্তর্জাতিক আইনে প্রথম যে নীতি স্পষ্টভাবে উঠে আসে, তা হল রিপ্যাট্রিয়েশন বা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার। কোনও বিদেশি নাগরিক অন্য দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে তাঁকে আটক করার এবং বৈধ কাগজপত্র যাচাই করার। ১৯৫৪ সালের কনভেনশন ও ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার সনদ—দুটি দলিলেই রাষ্ট্রগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে আটক বিদেশিদের মানবিক আচরণের অধিকার রক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে নন-রিফাউলমেন্ট নীতি অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তিকে এমন দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না যেখানে তাঁর জীবন বা স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে। যদিও ভারত এই নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেনি, তবুও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি হিসেবে ভারত অনেক সময়ই তা মেনে চলে।
ভারতের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয় বিদেশি আইন, ১৯৪৬, পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৭, এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (পূর্বের সিআরপিসি)-র সংশ্লিষ্ট ধারায়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে তাঁকে ‘ইলিগ্যাল ফরেইনার’ হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং সাধারণত স্থানীয় থানার মাধ্যমে শুরু হয় আইনি প্রক্রিয়া। আটকের পরে শুরু হয় পরিচয় নির্ণয়—যা এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ ধাপ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাগরিকত্ব নির্ধারণ না হলে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এগোতে পারে না। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর ক্ষেত্রেও প্রথমেই দরকার হয় বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি—যে ওই ব্যক্তি সত্যিই তাদের দেশের নাগরিক।
এখানেই আসে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভূমিকা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহু দিন ধরেই অনুপ্রবেশ রোধ ও ফেরত পাঠানো নিয়ে সহযোগিতার পরিবেশ রয়েছে। সীমান্ত সমন্বয় বৈঠক, স্বরাষ্ট্রসচিব স্তরের বৈঠক এবং বিএসএফ–বিজিবি আলোচনায় দুই দেশ নিয়মিতভাবে তথ্য আদানপ্রদান করে। কোনও ব্যক্তি যদি ভারতের কর্তৃপক্ষের কাছে জানান যে তিনি নিজ দেশে ফিরতে চান, তবে প্রথমে তাঁর পরিচয় যাচাই হয়। এরপর বাংলাদেশ হাই কমিশন বা কনস্যুলেট পরিচয় সার্টিফিকেট দিলে ভারত তাঁকে ডিপোর্টেশন বা রিপ্যাট্রিয়েশন প্রক্রিয়ায় পাঠাতে পারে। আদালত অনেক সময়ই আটক থাকার বদলে তাঁকে ‘রিটার্ন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার শর্তে’ মুক্তি দেয়।
যদি অনুপ্রবেশকারী নিজে ফিরে যেতে চান, তাহলে পদ্ধতি আরও সহজ। আদালতে ১৪ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা হয়, এবং বিচারক সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসকে যোগাযোগের নির্দেশ দেন। নথি যাচাই হয়ে গেলে এক্সিট পারমিট দেওয়া হয় এবং সাধারণত সীমান্তের নির্দিষ্ট চেকপোস্ট দিয়ে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে ‘হ্যান্ডওভার’ পদ্ধতিতে এই প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হয়। মানবিক কারণ দেখিয়ে কখনও কখনও ভারত সরকার আটক বিদেশিদের বিরুদ্ধে চলা মামলা প্রত্যাহারও করে নেয়—বিশেষত নারী, শিশু ও বিশেষ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে।
অবৈধ অনুপ্রবেশ যে অপরাধ, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে আন্তর্জাতিক আইনে অনুপ্রবেশকারীর মানবাধিকার রক্ষার কথা সমানভাবে বলা হয়েছে। অবৈধভাবে ঢুকে পড়া ব্যক্তিরও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ প্রাপ্য, কারণ তিনি একজন রাষ্ট্রবিহীন বা পরিচয়বিহীন মানুষ নন—তিনি এক দেশের নাগরিক, যিনি সেই দেশের সুরক্ষার অধিকারী। তাই ভারতে ঢুকে পড়া কোনও বাংলাদেশি নাগরিক যদি নিজে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চান, তবে আন্তর্জাতিক আইন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং ভারতের নিজস্ব আইনি কাঠামো—এই তিন মিলিয়েই তাঁর প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করে।
সীমান্তের নিরাপত্তা বজায় রাখা জরুরি, কিন্তু মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা আরও জরুরি। তাই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটিও কেবল নিরাপত্তা বা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ নয়—আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের কাঠামোর মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বর্তমান উষ্ণতা এই প্রক্রিয়াকে আরও বাস্তব, সুশৃঙ্খল ও মানবিক করে তুলছে।
সীমান্ত-সংলগ্ন অঞ্চলে অনুপ্রবেশ বা অবৈধ ঢুকে আসা বহু দেশেই একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। ভারতও সেই সমস্যার বাইরে নয়। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সীমান্তের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং মানবিক কারণ—বিভিন্ন উপাদান মিলিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে। কিন্তু একজন অনুপ্রবেশকারীকে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো কি শুধুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত? আন্তর্জাতিক আইন ও ভারতের আইনি প্রক্রিয়া এ বিষয়ে কী বলে?
আন্তর্জাতিক আইনে প্রথম যে নীতি স্পষ্টভাবে উঠে আসে, তা হল রিপ্যাট্রিয়েশন বা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার। কোনও বিদেশি নাগরিক অন্য দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে তাঁকে আটক করার এবং বৈধ কাগজপত্র যাচাই করার। ১৯৫৪ সালের কনভেনশন ও ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার সনদ—দুটি দলিলেই রাষ্ট্রগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে আটক বিদেশিদের মানবিক আচরণের অধিকার রক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে নন-রিফাউলমেন্ট নীতি অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তিকে এমন দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না যেখানে তাঁর জীবন বা স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে। যদিও ভারত এই নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেনি, তবুও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি হিসেবে ভারত অনেক সময়ই তা মেনে চলে।
ভারতের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয় বিদেশি আইন, ১৯৪৬, পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৭, এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (পূর্বের সিআরপিসি)-র সংশ্লিষ্ট ধারায়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে তাঁকে ‘ইলিগ্যাল ফরেইনার’ হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং সাধারণত স্থানীয় থানার মাধ্যমে শুরু হয় আইনি প্রক্রিয়া। আটকের পরে শুরু হয় পরিচয় নির্ণয়—যা এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ ধাপ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাগরিকত্ব নির্ধারণ না হলে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এগোতে পারে না। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর ক্ষেত্রেও প্রথমেই দরকার হয় বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি—যে ওই ব্যক্তি সত্যিই তাদের দেশের নাগরিক।
এখানেই আসে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভূমিকা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহু দিন ধরেই অনুপ্রবেশ রোধ ও ফেরত পাঠানো নিয়ে সহযোগিতার পরিবেশ রয়েছে। সীমান্ত সমন্বয় বৈঠক, স্বরাষ্ট্রসচিব স্তরের বৈঠক এবং বিএসএফ–বিজিবি আলোচনায় দুই দেশ নিয়মিতভাবে তথ্য আদানপ্রদান করে। কোনও ব্যক্তি যদি ভারতের কর্তৃপক্ষের কাছে জানান যে তিনি নিজ দেশে ফিরতে চান, তবে প্রথমে তাঁর পরিচয় যাচাই হয়। এরপর বাংলাদেশ হাই কমিশন বা কনস্যুলেট পরিচয় সার্টিফিকেট দিলে ভারত তাঁকে ডিপোর্টেশন বা রিপ্যাট্রিয়েশন প্রক্রিয়ায় পাঠাতে পারে। আদালত অনেক সময়ই আটক থাকার বদলে তাঁকে ‘রিটার্ন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার শর্তে’ মুক্তি দেয়।
যদি অনুপ্রবেশকারী নিজে ফিরে যেতে চান, তাহলে পদ্ধতি আরও সহজ। আদালতে ১৪ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা হয়, এবং বিচারক সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসকে যোগাযোগের নির্দেশ দেন। নথি যাচাই হয়ে গেলে এক্সিট পারমিট দেওয়া হয় এবং সাধারণত সীমান্তের নির্দিষ্ট চেকপোস্ট দিয়ে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে ‘হ্যান্ডওভার’ পদ্ধতিতে এই প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হয়। মানবিক কারণ দেখিয়ে কখনও কখনও ভারত সরকার আটক বিদেশিদের বিরুদ্ধে চলা মামলা প্রত্যাহারও করে নেয়—বিশেষত নারী, শিশু ও বিশেষ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে।
অবৈধ অনুপ্রবেশ যে অপরাধ, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে আন্তর্জাতিক আইনে অনুপ্রবেশকারীর মানবাধিকার রক্ষার কথা সমানভাবে বলা হয়েছে। অবৈধভাবে ঢুকে পড়া ব্যক্তিরও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ প্রাপ্য, কারণ তিনি একজন রাষ্ট্রবিহীন বা পরিচয়বিহীন মানুষ নন—তিনি এক দেশের নাগরিক, যিনি সেই দেশের সুরক্ষার অধিকারী। তাই ভারতে ঢুকে পড়া কোনও বাংলাদেশি নাগরিক যদি নিজে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চান, তবে আন্তর্জাতিক আইন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং ভারতের নিজস্ব আইনি কাঠামো—এই তিন মিলিয়েই তাঁর প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করে।
সীমান্তের নিরাপত্তা বজায় রাখা জরুরি, কিন্তু মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা আরও জরুরি। তাই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটিও কেবল নিরাপত্তা বা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ নয়—আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের কাঠামোর মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বর্তমান উষ্ণতা এই প্রক্রিয়াকে আরও বাস্তব, সুশৃঙ্খল ও মানবিক করে তুলছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন