বিহারে এনডিএ-র ‘মুখ’, তবে নীতীশই মুখ‌্যমন্ত্রী কিনা ধোঁয়শা রাখলেন মোদি

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “পুরো বিহার বলছে—ফির একবার এনডিএ সরকার, ফির একবার সুশাসন সরকার।”

বিহারে এনডিএ-র ‘মুখ’, তবে নীতীশই মুখ‌্যমন্ত্রী কিনা ধোঁয়শা রাখলেন মোদি

নয়াদিল্লি : বিহার বিধানসভা ভোটের একেবারে মুখে এসে বিরোধী মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তেজস্বী যাদবের নাম ঘোষণার পরেই পাল্টা জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার সমস্তিপুর থেকে বিহারে এনডিএ-র নির্বাচনী প্রচার শুরু করে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—এই নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবেন নীতীশ কুমারই। মোদির কথায়, “পুরো বিহার বলছে—ফির একবার এনডিএ সরকার, ফির একবার সুশাসন সরকার।” অর্থাৎ, জেডিইউ নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনপ্রিয় ‘সুশাসন বাবু’ ভাবমূর্তিকে সামনে রেখেই এনডিএ লড়াইয়ে নামছে—এটাই মোদির বার্তা।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় স্পষ্ট, বিহারে বিজেপি-জেডিইউ জোট নির্বাচনে নীতীশকেই ‘মুখ’ করে নামছে, যদিও নির্বাচনের পর তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রাখলেন মোদি। মহাগঠবন্ধন আরজেডি নেতা তেজস্বীকে মুখ‌্যমন্ত্রী ‘মুখ’ ঘোষণার পরই এই প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছিল, এনডিএ-র মুখ‌্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে? বৃহস্পতিবারই কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট বলেছিলেন, “আমাদের মুখ তেজস্বী যাদব, এখন বিজেপি বলুক তাদের মুখ কে?”

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, “নির্বাচনের পর এনডিএ নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন।” সেই সূত্র ধরে তেজস্বী বলেন, শাহর মন্তব্যেই বোঝা যায় নীতিশ কুমারের ভবিষ‌্যৎ অনিশ্চিত। অন‌্যদিকে, জন সুরজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোরও দাবি করেন, এনডিএ জিতলেও নীতীশ কুমার কোনও ভাবেই মুখ‌্যমন্ত্রী হচ্ছেন না। সে কারণেই শাহ নীতীশের নাম বলছেন না। এর আগের কোনও নির্বাচনে তো এমনটা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই বিহারে জোটসঙ্গীদের মধ্যে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী পদে রাখার প্রশ্নে নানা জল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছিল। বিরোধীরা একের পর এক কটাক্ষ করছিল, এমনকি তেজস্বী এক পর্যায়ে নীতীশের মানসিক স্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তবে জেডিইউ বারবারই বলে এসেছে, নীতীশ কুমারই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। গত এপ্রিলে দলীয় পোস্টারে স্পষ্ট করে লেখা হয়েছিল—“নীতীশ কুমার ২০৩০ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন।” ওই সময় বিজেপি নেতা ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনি বলেছিলেন, “আমরা এই নির্বাচন সম্রাট চৌধুরীর নেতৃত্বে জিতব।” সম্রাট বর্তমানে বিহারের দুই উপমুখ্যমন্ত্রীর একজন।

এদিন সমস্তিপুরের জনসভায় মোদি বিগত পাঁচ বছরে বিহারে বিজেপির উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বিহারের এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে বিজেপি উন্নয়নের কাজ করছে না। আজ বিহার বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য। আমি এমন এক ভবিষ্যৎ দেখছি, যেখানে প্রতিটি জেলায় স্থানীয় স্টার্টআপের উত্থান ঘটবে। যদি বিহারে ‘জঙ্গল রাজ’ চালু থাকত, তবে এটি কখনও সম্ভব হতো না।” এই মন্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ও তাঁর দল আরজেডি-র ‘জঙ্গল রাজ’-এর দিনগুলির দিকে তীব্র আক্রমণ ছুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী ৬ ও ১১ নভেম্বর দুই দফায় হবে বিহার বিধানসভা নির্বাচন। ভোটগণনা হবে ১৪ নভেম্বর। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এনডিএ ও মহাগঠবন্ধনের লড়াই এখন মূলত নীতীশ বনাম তেজস্বীর মুখোমুখি সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন