মার্কিন সরকার প্রথমে জানায় একটি ইউএফও দেখা গিয়েছে। তবে দু’দিনের মদ্যে বয়ান বদলায় মার্কিন সেনা।
১৯৪৭ সালের জুলাই। আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর মরুভূমি এলাকা রোজওয়েল শহর তখনও ঘুমিয়ে। নিস্তব্ধ জনপদ। কিন্তু সেই নিস্তব্ধতাই মুহূর্তে ভেঙে দিল একটি খবর। দ্রুত রটে গেল, মরুভূমির মাঝখানে আছড়ে পড়েছে একটি ‘উড়ন্ত চাকি’। যাকে আমরা আজ ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লায়িং অবজেক্ট’ বা UFO বলে জানি।
ঘটনাটা ঘটেছিল এক খামারবাড়ির কাছে। উইলিয়াম ব্রাজেল নামে এক কৃষক দেখেন তাঁর জমিতে ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত কিছু ধাতব টুকরো, যা সাধারণ ধাতুর মতো নয়। পাতলা, কিন্তু শক্ত। ভাঙলে বা পুড়ালেও ক্ষতি হয় না। কিছু ছিল রূপালি রঙের, আবার কিছুতে ছিল অদ্ভুত চিহ্ন খোদাই করা, যা কোনও ভাষা বলে বোঝা গেলেও চেনা যায় না। স্বভাবতই তা পাঠোদ্ধার হয়নি। ব্রাজেল প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো সেনাবাহিনীর পরীক্ষামূলক কোনও বিমান ভেঙে পড়েছে। কিন্তু তাঁর আবিষ্কার যখন স্থানীয় শেরিফের মাধ্যমে মার্কিন এয়ার ফোর্সের কাছে পৌঁছায়, তখনই শুরু হয় রহস্য আর আতঙ্কের নতুন অধ্যায়।
রোজওয়েল আর্মি এয়ার ফিল্ড থেকে প্রথম সরকারি বিবৃতিটি আসে ৮ জুলাই ১৯৪৭। সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়—“একটি উড়ন্ত চাকি উদ্ধার হয়েছে।” মুহূর্তে এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে গোটা আমেরিকা জুড়ে। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়, রেডিওতে বারবার সম্প্রচারিত হয় সেই খবর। তখন সবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, ঠান্ডা যুদ্ধের আতঙ্ক বাড়ছে, আর সেই সময়েই হঠাৎ করে UFO-র গল্প যেন মানুষের মধ্যে ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলও বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু আশ্চর্যভাবে, মাত্র একদিন পরই সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতি বদলে ফেলে। জানানো হয়, “ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আসলে ওটা ছিল একটি আবহাওয়ার বেলুন।” সংবাদপত্র আবার নতুন খবর ছাপে—“ফ্লাইং ডিস্ক নয়, ওয়েদার বেলুন।” একদিন আগের হইচই মুহূর্তে চাপা পড়ে যায়, অথচ প্রশ্নগুলো থেকে যায় অমীমাংসিত।
কেন প্রথমে বলা হয়েছিল UFO? কেন স্থানীয় কৃষক, সাংবাদিক এমনকি কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছিলেন, তাঁরা এমন কিছু ধাতব অংশ দেখেছেন, যা আগে কখনও দেখেননি? অনেকেই দাবি করেন, সেনা রাতারাতি ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে, সাধারণ মানুষকে ভেতরে যেতে দেয়নি। এমনকি ধাতব টুকরো জোর করে বাজেয়াপ্ত করা হয়। কেউ কেউ আরও বলেন, মরুভূমির বালিতে নাকি দেখা গিয়েছিল ভাঙা এক অদ্ভুত যান এবং তাতে থাকা অচেনা প্রাণীর দেহাবশেষ।
সরকার অবশ্য সব সময়ই এ ধরনের দাবি অস্বীকার করেছে। ১৯৯০-এর দশকে মার্কিন এয়ার ফোর্স আরও একবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায়, রোজওয়েলে আসলে ভেঙে পড়েছিল একটি গোপন সামরিক বেলুন, যার নাম ছিল ‘প্রজেক্ট মোগুল’—যা তৈরি হয়েছিল সোভিয়েত পারমাণবিক পরীক্ষার শব্দতরঙ্গ ধরার জন্য। কিন্তু তবুও সন্দেহ দূর হয়নি। বরং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আরও জোরালো হয়।
রোজওয়েল এখন শুধু একটি শহরের নাম নয়, বরং আধুনিক UFO কাহিনির জনক। এই ঘটনাই UFO–ভিনগ্রহী বিশ্বাসের মূল স্রোত তৈরি করেছে। আজও রেডিট, ইউটিউব, কিংবা ডকুমেন্টারি প্ল্যাটফর্মে রোজওয়েল নিয়ে আলোচনা হলে লাখো মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেউ বলেন, সরকার আসল সত্য গোপন করেছে। কেউ মনে করেন, ভিনগ্রহীরা আসলেই পৃথিবীতে নেমেছিল, কিন্তু ঠান্ডা যুদ্ধের রাজনীতি আর সামরিক গোপনীয়তা সবকিছু চেপে দেয়।
প্রায় ৮০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। তবুও রোজওয়েলের রহস্য আজও উন্মোচন হয়নি। শহরটি এখন UFO-পর্যটনের কেন্দ্র, যেখানে এলিয়েন আকৃতির হোটেল, জাদুঘর আর উৎসব চলে প্রতি বছর। কিন্তু মূল প্রশ্নটা আজও হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়—সেই রাতে মরুভূমির আকাশ থেকে আসলে কী পড়েছিল? সত্যিই কি ওটা ছিল ভিনগ্রহী যান, নাকি কেবল ঠান্ডা যুদ্ধের সামরিক গোপন প্রকল্প?
রাতের আকাশে তারা ঝিকমিক করলে, অনেকেরই মনে হয়—রোজওয়েলের সেই আকাশের নিচে হয়তো একদিন পৃথিবীতে নেমেছিল এমন কিছু, যা মানুষ এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। আর সেই অমীমাংসিত প্রশ্নই রোজওয়েলকে করে তুলেছে পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত UFO রহস্যের কেন্দ্র।
১৯৪৭ সালের জুলাই। আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর মরুভূমি এলাকা রোজওয়েল শহর তখনও ঘুমিয়ে। নিস্তব্ধ জনপদ। কিন্তু সেই নিস্তব্ধতাই মুহূর্তে ভেঙে দিল একটি খবর। দ্রুত রটে গেল, মরুভূমির মাঝখানে আছড়ে পড়েছে একটি ‘উড়ন্ত চাকি’। যাকে আমরা আজ ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লায়িং অবজেক্ট’ বা UFO বলে জানি।
ঘটনাটা ঘটেছিল এক খামারবাড়ির কাছে। উইলিয়াম ব্রাজেল নামে এক কৃষক দেখেন তাঁর জমিতে ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত কিছু ধাতব টুকরো, যা সাধারণ ধাতুর মতো নয়। পাতলা, কিন্তু শক্ত। ভাঙলে বা পুড়ালেও ক্ষতি হয় না। কিছু ছিল রূপালি রঙের, আবার কিছুতে ছিল অদ্ভুত চিহ্ন খোদাই করা, যা কোনও ভাষা বলে বোঝা গেলেও চেনা যায় না। স্বভাবতই তা পাঠোদ্ধার হয়নি। ব্রাজেল প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো সেনাবাহিনীর পরীক্ষামূলক কোনও বিমান ভেঙে পড়েছে। কিন্তু তাঁর আবিষ্কার যখন স্থানীয় শেরিফের মাধ্যমে মার্কিন এয়ার ফোর্সের কাছে পৌঁছায়, তখনই শুরু হয় রহস্য আর আতঙ্কের নতুন অধ্যায়।
রোজওয়েল আর্মি এয়ার ফিল্ড থেকে প্রথম সরকারি বিবৃতিটি আসে ৮ জুলাই ১৯৪৭। সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়—“একটি উড়ন্ত চাকি উদ্ধার হয়েছে।” মুহূর্তে এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে গোটা আমেরিকা জুড়ে। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়, রেডিওতে বারবার সম্প্রচারিত হয় সেই খবর। তখন সবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, ঠান্ডা যুদ্ধের আতঙ্ক বাড়ছে, আর সেই সময়েই হঠাৎ করে UFO-র গল্প যেন মানুষের মধ্যে ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলও বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু আশ্চর্যভাবে, মাত্র একদিন পরই সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতি বদলে ফেলে। জানানো হয়, “ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আসলে ওটা ছিল একটি আবহাওয়ার বেলুন।” সংবাদপত্র আবার নতুন খবর ছাপে—“ফ্লাইং ডিস্ক নয়, ওয়েদার বেলুন।” একদিন আগের হইচই মুহূর্তে চাপা পড়ে যায়, অথচ প্রশ্নগুলো থেকে যায় অমীমাংসিত।
কেন প্রথমে বলা হয়েছিল UFO? কেন স্থানীয় কৃষক, সাংবাদিক এমনকি কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছিলেন, তাঁরা এমন কিছু ধাতব অংশ দেখেছেন, যা আগে কখনও দেখেননি? অনেকেই দাবি করেন, সেনা রাতারাতি ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে, সাধারণ মানুষকে ভেতরে যেতে দেয়নি। এমনকি ধাতব টুকরো জোর করে বাজেয়াপ্ত করা হয়। কেউ কেউ আরও বলেন, মরুভূমির বালিতে নাকি দেখা গিয়েছিল ভাঙা এক অদ্ভুত যান এবং তাতে থাকা অচেনা প্রাণীর দেহাবশেষ।
সরকার অবশ্য সব সময়ই এ ধরনের দাবি অস্বীকার করেছে। ১৯৯০-এর দশকে মার্কিন এয়ার ফোর্স আরও একবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায়, রোজওয়েলে আসলে ভেঙে পড়েছিল একটি গোপন সামরিক বেলুন, যার নাম ছিল ‘প্রজেক্ট মোগুল’—যা তৈরি হয়েছিল সোভিয়েত পারমাণবিক পরীক্ষার শব্দতরঙ্গ ধরার জন্য। কিন্তু তবুও সন্দেহ দূর হয়নি। বরং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আরও জোরালো হয়।
রোজওয়েল এখন শুধু একটি শহরের নাম নয়, বরং আধুনিক UFO কাহিনির জনক। এই ঘটনাই UFO–ভিনগ্রহী বিশ্বাসের মূল স্রোত তৈরি করেছে। আজও রেডিট, ইউটিউব, কিংবা ডকুমেন্টারি প্ল্যাটফর্মে রোজওয়েল নিয়ে আলোচনা হলে লাখো মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেউ বলেন, সরকার আসল সত্য গোপন করেছে। কেউ মনে করেন, ভিনগ্রহীরা আসলেই পৃথিবীতে নেমেছিল, কিন্তু ঠান্ডা যুদ্ধের রাজনীতি আর সামরিক গোপনীয়তা সবকিছু চেপে দেয়।
প্রায় ৮০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। তবুও রোজওয়েলের রহস্য আজও উন্মোচন হয়নি। শহরটি এখন UFO-পর্যটনের কেন্দ্র, যেখানে এলিয়েন আকৃতির হোটেল, জাদুঘর আর উৎসব চলে প্রতি বছর। কিন্তু মূল প্রশ্নটা আজও হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়—সেই রাতে মরুভূমির আকাশ থেকে আসলে কী পড়েছিল? সত্যিই কি ওটা ছিল ভিনগ্রহী যান, নাকি কেবল ঠান্ডা যুদ্ধের সামরিক গোপন প্রকল্প?
রাতের আকাশে তারা ঝিকমিক করলে, অনেকেরই মনে হয়—রোজওয়েলের সেই আকাশের নিচে হয়তো একদিন পৃথিবীতে নেমেছিল এমন কিছু, যা মানুষ এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। আর সেই অমীমাংসিত প্রশ্নই রোজওয়েলকে করে তুলেছে পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত UFO রহস্যের কেন্দ্র।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন