প্রায় ১১ বছর ধরে ডনেৎস্ক দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পুতিন, কিন্তু ইউক্রেনের সেনার কঠোর প্রতিরোধে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বারবার।
ওয়াশিংটন : ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাজি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তবে তাঁর নিজের শর্তে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে এমনই জানিয়েছেন তিনি— দাবি করেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ডনেৎস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিতে হবে রাশিয়ার হাতে। মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্তাকে উদ্ধৃত করে এই খবর জানিয়েছে 'দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট'।
প্রায় ১১ বছর ধরে ডনেৎস্ক দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পুতিন, কিন্তু ইউক্রেনের সেনার কঠোর প্রতিরোধে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বারবার। ইউক্রেনের মতে, ডনেৎস্ক রাশিয়ার হাতে গেলে কিয়েভের পথে বিপদ আরও ঘনিয়ে আসবে, কারণ সেই দিক দিয়েই রাজধানীতে ঢোকার রাস্তা খুলে যাবে মস্কোর জন্য।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে শুরু হয় তথাকথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’। এর পর সাড়ে তিন বছরে ইউক্রেনের বহু অঞ্চল দখল করে নেয় রুশ বাহিনী, এবং ক্রেমলিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— পিছু হটার কোনো প্রশ্নই নেই। মার্কিন সূত্রের খবর, ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন এই অবস্থান ফের জোর দিয়ে জানান।
তবে ডনেৎস্কের দাবি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি ট্রাম্প। ফোনালাপের পর তিনি শুধু জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘বড় অগ্রগতি’ হয়েছে। তিনি আরও জানান, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎ হবে। তার কিছু পরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকের পর নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ তিনি লেখেন, “যথেষ্ট যুদ্ধ হয়েছে, এখন সময় দুই দেশেরই থামার। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে দু’পক্ষই জয়ী হবে।” জ়েলেনস্কিও সেই বার্তাকে সমর্থন করেন।
তবে ট্রাম্প এও স্পষ্ট করেছেন, আপাতত ইউক্রেনকে আমেরিকা দূরপাল্লার টমাহক মিসাইল বিক্রি করবে না। বিশ্লেষকদের ধারণা, পুতিন ফোনালাপেই এই বিষয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন।
মার্কিন প্রশাসনের সূত্রে আরও জানা গেছে, পুতিন শুধু ডনেৎস্ক নয়, ইউক্রেনের জ়াপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলগুলিরও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছেন। যদিও এই দুই এলাকার আংশিক দখল ইতিমধ্যেই রাশিয়ার হাতে রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন কোনোভাবেই এই শর্ত মানবে না বা নিজেদের ভূখণ্ড মস্কোর হাতে তুলে দেবে না। এখন সকলের নজর বুদাপেস্টে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের দিকে—সেই আলোচনাই স্পষ্ট করবে, ‘বড় অগ্রগতি’ বলতে ট্রাম্প আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কতটা বাস্তব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন