‘রাম কি পৌড়ি’ ও আশপাশের ৫৬টি ঘাটে জ্বালানো হয়েছে ২৬ লক্ষেরও বেশি প্রদীপ— যা বিশ্বরেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা রাখে।
অযোধ্যা : দীপাবলির প্রাক্কালে অযোধ্যা আবারও ইতিহাস গড়ার পথে। এবার ‘রাম কি পৌড়ি’ ও আশপাশের ৫৬টি ঘাটে জ্বালানো হয়েছে ২৬ লক্ষেরও বেশি প্রদীপ— যা বিশ্বরেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা রাখে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, এই আলোর উৎসব শুধু চোখ জুড়াবে না, কোটি ভক্তের মনে ভরে দেবে ভক্তি ও শ্রদ্ধার আবেগ। রেকর্ড গড়ার এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের স্বেচ্ছাসেবকরা— সংখ্যা প্রায় ১০,০০০। তাঁরা ইতিমধ্যেই প্রদীপে সলতে ও তেল ভরার কাজ শুরু করেছেন। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালনের সময় গোটা শহর যেন পরিণত হবে এক আলোকময় স্বর্গে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অ্যাডজুডিকেটর রিচার্ড স্টেনিং জানিয়েছেন, নির্ভুলভাবে প্রদীপের সংখ্যা গণনার জন্য প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে— অংশগ্রহণকারীদের ট্র্যাক করতে কিউআর কোড স্ক্যান করা হচ্ছে, প্রতিটি জোনে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টুয়ার্ডরা নিশ্চিত করছেন যেন সব প্রদীপই সঠিকভাবে জ্বলে। কোনও প্রদীপ নিভে গেলে বা জ্বালানো না হলে তা মোট গণনায় বাদ যাবে।
এই ঐতিহাসিক আয়োজনের মধ্যেই তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। সমাজবাদী পার্টির নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব দীপাবলির আলোচনায় ক্রিসমাসের উদাহরণ টেনে বলেছেন, “সারা বিশ্বে বড়দিনের সময় শহরগুলো আলোয় ঝলমল করে। আমাদেরও শেখা উচিত ওদের থেকে। এত টাকা খরচ করে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে কী হবে? আলোয় সাজুক আমাদের শহরও।” অখিলেশের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
ভিএইচপি-র মুখপাত্র বিনোদ বনশল এক্সে লিখেছেন, “দেখে নিন, দীপাবলির সময় ক্রিসমাসের প্রশংসা করছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী! প্রদীপ জ্বালানোর কথা শুনলেই তাঁর বুক জ্বলে ওঠে। তিনি ১০০ কোটিরও বেশি হিন্দুকে শেখাচ্ছেন— প্রদীপে টাকা নষ্ট কোরো না, ক্রিসমাস থেকে শেখো।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, অখিলেশ বিদেশি সংস্কৃতিকে গৌরব দেন, অথচ ভারতীয় ঐতিহ্যকে হেয় করেন। তাঁর বক্তব্যে ‘জিহাদি ও ধর্মান্তর গ্যাং’-এর সমর্থন স্পষ্ট। বনশলের কটাক্ষ, “রাম ও কৃষ্ণের ভূমিতে এখন শেখানো হচ্ছে ক্রিসমাসের আলোয় মুগ্ধ হতে! এমন নেতাদের দৌরাত্ম্যে বেড়েছে অবৈধ ধর্মান্তর। দীপাবলির আগে কুমোরদের হাতে তৈরি প্রদীপই যেন তাঁর চোখে বালি হয়ে বিঁধেছে। আসলে অযোধ্যার আলোর উজ্জ্বলতাই তাঁদের পোড়াচ্ছে।”
অখিলেশ অবশ্য নিজের বক্তব্যে অটল থেকে বলেন, বর্তমান সরকার শুধু প্রদর্শন করছে, বাস্তবে শহরগুলিকে সুন্দর ও আলোকিত করার কোনও কাজ করছে না। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় এলে এমন ব্যবস্থা হবে যাতে শহরগুলো স্থায়ীভাবে আলোয় ভরে ওঠে।
দীপাবলির দু’দিন আগে এই রাজনৈতিক তর্কের মধ্যেই অযোধ্যায় চলছে অভূতপূর্ব প্রস্তুতি। রামের জন্মভূমি এবার শুধু ধর্মীয় ভক্তির নয়, গিনেস রেকর্ডেরও সাক্ষী হতে চলেছে— ২৬ লক্ষ প্রদীপের দীপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে গোটা শহর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন