দীপাবলিতে মিনি কামানের ভয়াবহতা! মধ্যপ্রদেশে কার্বাইড বন্দুক ফেটে দৃষ্টি হারাল প্রায় তিনশো শিশু

দীপাবলির আগে থেকে এই নিষিদ্ধ খেলনা অনায়াসে বিক্রি হয়েছে রাজ্যের নানা প্রান্তে।

দীপাবলিতে মিনি কামানের ভয়াবহতা! মধ্যপ্রদেশে কার্বাইড বন্দুক ফেটে দৃষ্টি হারাল প্রায় তিনশো শিশু

ভোপাল : দীপাবলির উৎসব আলো নয়, অন্ধকার নামিয়ে আনল মধ্যপ্রদেশে। আতশবাজি আর শব্দবাজির পাশাপাশি এ বছর রাজ্যজুড়ে দেখা গিয়েছে এক ভয়ংকর প্রবণতা—‘মিনি কামান’ বা কার্বাইড বন্দুক কেনার হিড়িক। নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও এই বিপজ্জনক খেলনা বিক্রি হয়েছে ফুটপাত থেকে মেলা পর্যন্ত সর্বত্র। এর ফল, ভয়াবহ। রাজ্য জুড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯২ জন শিশু দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আরও অন্তত ১২২ শিশু গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, আহতের সংখ্যা ও ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

ভোপাল, ইন্দোর, জবলপুর ও গোয়ালিয়রের একাধিক হাসপাতালে চোখে মারাত্মক আঘাত নিয়ে ভর্তি হয়েছে শত শত শিশু। শুধুমাত্র ভোপালের হামিদিয়া হাসপাতালে গত ৭২ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ২৬ জন শিশু। রাজ্যজুড়ে মোট ৫০০-রও বেশি শিশু চিকিৎসাধীন। হামিদিয়া হাসপাতালের সিএমএইচও ডা. মণীশ শর্মা বলেন, “কার্বাইড বন্দুক মোটেই খেলনা নয়, এটি বিস্ফোরকভর্তি যন্ত্র। বিস্ফোরণের ফলে ধাতব টুকরো ও কার্বাইডের বাষ্প রেটিনা পুড়িয়ে দিচ্ছে। বহু শিশুর চোখের স্নায়ু ছিঁড়ে গিয়েছে, ফলে তারা স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”

তাহলে কী এই কার্বাইড বন্দুক? সাধারণত টিন বা লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি হয় এই ‘মিনি কামান’। এর ভিতরে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, দেশলাইয়ের কাঠির বারুদ ও বারুদ মিশিয়ে ফাঁপা পাইপের ছিদ্র দিয়ে আগুন ধরানো হয়। মুহূর্তেই তীব্র শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে, ছিটকে বেরোয় আগুনের গোলা। বাজারে “ছোট কামান” বা “ডায়নামিক খেলনা বন্দুক” নামে বিক্রি হয় এগুলি। দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। অথচ গত ১৮ অক্টোবরই মধ্যপ্রদেশ সরকার এই বিপজ্জনক বন্দুক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

তবুও দীপাবলির আগে থেকে এই নিষিদ্ধ খেলনা অনায়াসে বিক্রি হয়েছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। বিদিশা জেলার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে জানা গিয়েছে। সেখানে খোলা বাজারে দেদার বিক্রি চলেছে কার্বাইড বন্দুকের। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ভিডিও দেখে অনেক কিশোর নিজেরাই বাড়িতে বানাতে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। ১৭ বছরের নেহা জানায়, “হোমমেড কার্বাইড বন্দুক কিনেছিলাম, কিন্তু বিস্ফোরণ ঘটতেই আমার চোখ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়।” রাজ বিশ্বকর্মা নামে এক কিশোরও একইভাবে নিজের হাতে বানানো বন্দুকে বিস্ফোরণে চোখ হারিয়েছে।

ঘটনার পর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিজেপি শাসিত রাজ্যে এত বিপজ্জনক অস্ত্র প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও কেন পুলিশ-প্রশাসন নীরব ছিল, তা নিয়েও চলছে চাপানউতোর। বিদিশায় অবৈধ বিক্রির অভিযোগে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা আর কে মিশ্র জানিয়েছেন, “তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যারা এই বিপজ্জনক বন্দুক বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, দীপাবলির উৎসবের আগেই প্রশাসন সক্রিয় হলে এই বিপর্যয় এড়ানো যেত। এখন রাজ্যজুড়ে শুধু কান্না, শোক আর অন্ধকার—আলো উৎসবেই চোখের আলো হারাল প্রায় তিনশো শিশু।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন