এলআইসির তহবিল আদানিকে বাঁচাতে ব্যবহার? ‘মোদানি মেগাস্ক্যাম’-এর অভিযোগে কেন্দ্রকে তোপ দাগল কংগ্রেস

 এলআইসির আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে তোলপাড় রাজনীতি।

**এলআইসির তহবিল আদানিকে বাঁচাতে ব্যবহার? ‘মোদানি মেগাস্ক্যাম’-এর অভিযোগে কেন্দ্রকে তোপ দাগল কংগ্রেস


নয়াদিল্লি: শিল্পপতি গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গোষ্ঠীতে ভারতীয় জীবনবিমা নিগমের (এলআইসি) বিপুল অর্থ বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে। বিদেশি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কংগ্রেস দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ এই শিল্পপতিকে আর্থিক বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত এলআইসির তহবিল পদ্ধতিগতভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক পরিষেবা দফতর, নীতি আয়োগ ও এলআইসির যৌথ পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার লগ্নি আদানি গোষ্ঠীর এক সংস্থায় করা হয়।

কংগ্রেসের অভিযোগ, ওই বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল বাজারে আদানিদের প্রতি আস্থা জাগানো এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদেরও উৎসাহিত করা। অথচ তখনই মার্কিন আদালতে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলা চলছিল, এবং আমেরিকায় তাদের একাধিক প্রকল্পে ঋণ আটকে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় এলআইসি পলিসি হোল্ডারদের প্রিমিয়ামের তহবিল ব্যবহার করে আদানিদের বন্ড ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করেছিল। কংগ্রেসের দাবি, এই ঘটনায় দেশের ৩০ কোটি পলিসি হোল্ডারের কষ্টার্জিত সঞ্চয় গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজে লাগানো হয়েছে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রশ্ন তোলেন, “মোদির ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে জনগণের সঞ্চয় কেন অপব্যবহার করা হল?” দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশও বলেন, “মোদানির যৌথ উদ্যোগে এলআইসির মতো সংস্থার অর্থ বিশেষ সংস্থার স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে মাত্র চার ঘণ্টার ট্রেডিংয়ে এলআইসির বাজারমূল্য কমেছিল প্রায় ৭৮৫০ কোটি টাকা।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও নীতি আয়োগের কর্মকর্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিনিয়োগ অনুমোদন করানো হয়েছিল। কংগ্রেস দাবি করেছে, ‘মোদানি মেগাস্ক্যাম’-এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত এবং প্রথম ধাপে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখুক, পরবর্তী পর্যায়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হোক।

অন্যদিকে এলআইসি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন এবং তারা স্বাধীনভাবে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদানি গোষ্ঠীও জানিয়েছে, সরকারের কোনও ভূমিকা নেই এবং বহু বছর ধরে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা লাভবান হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এই বিনিয়োগকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক রঙে দেখা ঠিক নয়, কারণ ৩৬ হাজার কোটি টাকার লগ্নি এলআইসির বিশাল পোর্টফোলিওর তুলনায় বড় অঙ্ক নয়। তবুও বিদেশি প্রতিবেদন ও কংগ্রেসের তোপের মধ্যেই নতুন করে রাজনীতির পারদ চড়েছে, আর এলআইসি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থার সিদ্ধান্তে সরকারি প্রভাব সত্যিই অনুপস্থিত কি না, তা সময়ই প্রমাণ করবে।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন