পাকিস্তানে ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ রদের দাবিতে ঐতিহাসিক আইনি লড়াইয়ে তরুণী মাহনুর

পাকিস্তানে উৎপাদিত স্যানিটারি প্যাডে ১৮ শতাংশ বিক্রয়কর আরোপ করা হয়, আর আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ ২৫ শতাংশ। 

পাকিস্তানে ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ রদের দাবিতে ঐতিহাসিক আইনি লড়াইয়ে তরুণী মাহনুর

ইসলামাবাদ : পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ পুরুষতান্ত্রিক ও কট্টরপন্থী দেশগুলিতে নারীর অধিকার রক্ষার লড়াই ভীষণ কঠিন। সেই চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছেন পাকিস্তানি তরুণী মাহনুর ওমর। তার কৈশোরের লজ্জা ও অসহায় অভিজ্ঞতাকে রূপ দিয়েছেন এক ঐতিহাসিক আইনি লড়াইয়ে। ২৫ বছর বয়সী মাহনুর সম্প্রতি লাহোর হাই কোর্টে আবেদন করেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, স্যানিটারি প্যাডের ওপর আরোপিত সরকারি করকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে হবে। তার মতে, এই কর নারীর ওপর বৈষম্যমূলক চাপ আরোপ করছে এবং এটি ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ হিসেবে অভিহিত করা যায়।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানে উৎপাদিত স্যানিটারি প্যাডে ১৮ শতাংশ বিক্রয়কর আরোপ করা হয়, আর আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ ২৫ শতাংশ। বিভিন্ন প্রদেশের করের সংযোজনের ফলে কখনও কখনও মোট কর ৪০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এর ফলে একজন সাধারণ নারী স্যানিটারি প্যাড কিনতে দারুণ অর্থনৈতিক চাপে পড়ে এবং গরিব মহিলাদের জন্য এটি অনেকাংশে অচল হয়ে যায়। মাহনুর আদালতে বলেন, এটি শুধুই কর নয়, এটি নারীর জীবনের মৌলিক চাহিদাকে বিলাসিত পণ্যে পরিণত করছে এবং সংবিধানের নিশ্চয়তা দেওয়া সমতা ও মর্যাদার ধারাকে ভঙ্গ করছে।

ইউনিসেফ ও ওয়াটারএইডের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পাকিস্তানের মাত্র ১২ শতাংশ নারী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। বাকি নারীরা পুরোনো কাপড় বা অনিরাপদ বিকল্পের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে স্যানিটারি প্যাডের প্যাকেটের দাম ৪৫০ পাকিস্তানি রুপি, যা অনেক নিম্নআয়ের পরিবারের একবেলার খাবারের সমান। কর তুলে দিলে এই খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে, যা নারীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন আনবে।

মাহনুরের এই উদ্যোগ পাকিস্তানে নারী অধিকার কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তারা মনে করেন, এই আইনি লড়াই নারীর স্বাভাবিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন