মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রী শ্রী ওঙ্কারনাথ চেয়ার; গবেষণায় জাতীয়-আন্তর্জাতিক দিগন্ত

পাঁচ লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠের আগেই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ এই বিশেষ বার্তা সনাতনীদের কাছে খুবই আস্থার।

মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রী শ্রী ওঙ্কারনাথ চেয়ার; গবেষণায় জাতীয়-আন্তর্জাতিক দিগন্ত

কলকাতা : রাজ্যে বাবরি মসজিদ নির্মাণ এবং পাঁচ লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ আবহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বীরভূমের বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় একজন হিন্দু ধর্ম গুরুর নামে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চেয়ার প্রতিষ্ঠা করা হল। পশ্চিমবঙ্গে কোনও ধর্ম গুরুর নামে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চেয়ার তৈরি পশ্চিমবঙ্গে বিরল ঘটনা।

অখিল ভারত জয়গুরু সম্প্রদায়ের ধর্ম গুরু সীতারাম দাস ওঙ্কারনাথ গ্রামেগঞ্জে মানুষের মধ্যে জাত পাত ধর্মের বিভেদ বিভাজন ঘোচানোর জন্য একটা সময় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ সহ সারা ভারতবর্ষে পদব্রজে প্রচার করেছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা। তারই নীতি আদর্শকে মান্যতা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই হলো বীরভূমের বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গনে নতুন দিগন্তের সূচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা পেল ‘অনন্তশ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল চেয়ার’।


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বহু আগেই ডানলপের কাছে সীতারামদাস ওঙ্কার নাথ প্রতিষ্ঠিত শতাধিক আশ্রমের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মহামিলন মঠে গিয়ে সারা ভারতে ওঙ্কারনাথ মিশনের সেবাযজ্ঞে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। আচার্য ও প্রেসিডেন্ট কিঙ্কর বিঠঠল রামানুজ মহারাজ ও মহাসচিব তথা মিশনের সভাপতি কিংকর প্রিয়নাথকে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, শ্রী শ্রী ওঙ্কারনাথ দেবের জীবনদর্শন ও শিক্ষাকে নবীন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সরকার সর্বতোভাবে পাশে থাকবে।

বীরভূমে বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করাটাও ছিল তাঁর বহুদিনের ইচ্ছা—একটি উদার শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা, যা ভক্তি–সাধনা থেকে সাহিত্য–সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রেই নতুন পরিসর খুলে দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারতের ভক্তি–দর্শন, ভারতীয় দর্শনচর্চা এবং আধ্যাত্মিক–সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম স্তম্ভ অনন্তশ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথের উপর সুসংগঠিত ও উচ্চমানের গবেষণা চালাতেই এই বিশেষ চেয়ার গঠন হয়েছে। লক্ষ্য—ইন্দোলজি, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, ভক্তি-প্রথা, ভাষা–সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; ওঙ্কারনাথ–পরম্পরার দুর্লভ পাণ্ডুলিপি, গ্রন্থ ও আর্কাইভ সংগ্রহ, অনুবাদ, প্রকাশনা; জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার–ওয়ার্কশপের আয়োজন; এবং আগামিদিনে এমফিল, পিএইচডি-সহ বিশেষ ডিগ্রি কোর্সের সূচনা।

উপাচার্য দিলীপকুমার মাইতি বলেন, “এই চেয়ার প্রতিষ্ঠা শুধু একাডেমিক উদ্যোগ নয়—বাংলা তথা দেশের আধ্যাত্মিক ও দর্শন–ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণা এবং চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ ছাড়া এটি সম্ভব হত না।” তাঁর মতে, এর ফলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণার মান ও বিস্তার দু’‌টিই বাড়বে। অখিল ভারত জয়গুরু সম্প্রদায়ের আচার্য কিঙ্কর বিঠঠল রামানুজ মহারাজ বলেন, “লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছে এই ঘোষণা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। নাম, ভক্তি, সেবা ও সাম্যের বার্তা এখন আরও বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে।”

ওঙ্কারনাথ মিশনের সভাপতি কিঙ্কর প্রিয়নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, “সরকারের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের গবেষণা, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং প্রামাণ্য নথিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।” সরকারি নীতিমালা মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে চেয়ারের সব প্রকল্প। গবেষণা, সাংস্কৃতিক নথিকরণ ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নেবে ওঙ্কারনাথ মিশনও।শিক্ষামহলের মতে, এই চেয়ার স্থাপনা রাজ্যের সাংস্কৃতিক গবেষণা পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলার আধ্যাত্মিক–দর্শনিক ঐতিহ্যকে নতুন স্বীকৃতি দেবে।

পাঁচ লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠের আগেই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ এই বিশেষ বার্তা সনাতনীদের কাছে খুবই আস্থার। প্রসঙ্গত নতুন বছরের প্রথমেই মহামিলন মঠের সামনে উদ্বোধন হতে চলেছে গেটওয়ে অফ কলকাতা । যেখানে প্রতিষ্ঠিত হবেন শ্রী শ্রী ঠাকুর ওঙ্কারনাথ দেবের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি। একইসঙ্গে গঙ্গার পশ্চিম তীরের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একইসঙ্গে উদ্বোধন হতে চলেছে গেটওয়ে অফ কলকাতা করিডোর। শ্রী শ্রী ওঙ্কারনাথ দেব সনাতন ধর্মের স্তম্ভ স্বরূপ। দেশজুড়ে কোটি কোটি ভক্ত ওঙ্কারনাথ মিশনের। বাংলার একটা বড় অংশ মিশনের ভাবলম্বনকারী। এই ক্ষেত্রে এই ঘোষণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন