SIR যেন উৎসব! ভোটারদের ঘরে ফেরার হিড়িক, বাস–ট্রেনে উপচে পড়ছে ভিড়

এই সময়ে রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে ভোটার যাচাইয়ের এক নতুন ‘মাইগ্রেশন সিজন’।

SIR যেন উৎসব! ভোটারদের ঘরে ফেরার হিড়িক, বাস–ট্রেনে উপচে পড়ছে ভিড়
এআই কৃত ইমেজ।

কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া। আর সেই সূত্রে রাজ্যজুড়ে ফের এক ‘ফেরার উৎসব’। যে দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় পুজো বা ভোটের সময়—সেই দৃশ্যই এখন চোখে পড়ছে রেলস্টেশন আর বাস টার্মিনাস জুড়ে। কলকাতা ও আশপাশের শহরে কাজ করা মেদিনীপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষ কাতারে কাতারে ফিরছেন নিজেদের নাম ভোটার তালিকায় সঠিকভাবে আছে কি না তা নিশ্চিত করতে।

বাবুঘাট, ধর্মতলা, সল্টলেক, শিয়ালদহ, হাওড়া—সব জায়গায় একই ছবি। বাস কাউন্টারে লম্বা লাইন, ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় তিলধারণের জায়গা নেই। সরকারি-বেসরকারি অফিসে শনিবার ছুটি মিলতেই বহু মানুষ দল বেঁধে বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছেন। কেউ ফিরছেন ভোরের লোকাল ধরে, কেউ বা রাতের বাসে। সপ্তাহান্তে ফর্ম পূরণ ও যাচাই প্রক্রিয়া সেরে আবার সোমবার সকালে ফিরছেন কাজে।

মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে বহু মানুষ কলকাতা ও নিউটাউন এলাকায় নির্মাণশিল্পে কাজ করতে আসেন। এমন একটি দল শুক্রবার রাতে এয়ারপোর্ট ১ নম্বর বাসস্ট‌্যান্ডে ভীড় করে দাঁড়িয়ে ছিল বাসের অপেক্ষায়। তাঁদের মধ্যেই 
মালদা থেকে আসা রতন শেখের কথায়, “ভোটের আগে নিজের নাম যেন না কাটা যায়, তাই বাড়ি যাচ্ছি। কাজের ফাঁকে একটু কষ্ট করলেও নামটা ঠিক রাখা দরকার।” একইভাবে মুর্শিদাবাদের গৃহপরিচারিকা ফুলমনি বিবি বলেন, “SIR-এর খবর পেয়ে বউদি বলল ছুটি নিয়ে যেও। শনিবার রাতে যাব, রবিবারে ফর্ম জমা দিয়ে আবার ফিরে আসব।”

তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ আসলে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তৃণমূলের রাজ‌্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “SIR-এর নামে কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনী রাজনীতি করছে। সাধারণ মানুষকে হয়রান করা হচ্ছে।” অন্যদিকে বিজেপি দাবি করছে, এই প্রক্রিয়া গণতন্ত্রকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভুল করছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমিক ভট্টাচার্য বলেন, “যাদের নাম অবৈধভাবে তালিকায় ঢুকেছিল, এবার তারা বাদ যাবে। প্রকৃত ভোটাররাই তালিকায় থাকবেন।”

রাজনীতির এই দুই মেরুর টানাপোড়েনের মধ্যেই সাধারণ ভোটার এখন সবচেয়ে ব্যস্ত। কারণ, নাম তালিকায় না থাকলে ভোটাধিকার হারানোর আশঙ্কা। ফলে, পুজোর পরের এই সময়ে রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে ভোটার যাচাইয়ের এক নতুন ‘মাইগ্রেশন সিজন’। ট্রেনের হুইসেল, বাসের হর্ন আর ব্যাগভর্তি নথি—সব মিলিয়ে এখন বাংলার জনজীবনে চলছে এক নীরব কিন্তু তীব্র গণতান্ত্রিক আন্দোলন: নিজের নাম ভোটার তালিকায় রাখার লড়াই।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন