হোয়াইটচ্যাপেলের গলিগুলিতে ‘রিপার ওয়াক’ নামে রাতের ট্যুর হয়, যেখানে গাইডরা মশাল হাতে বলে চলেন সেই ভয়ঙ্কর রাতের গল্প।
১৮৮৮ সালের শরৎকাল। লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল নামে এক অন্ধকার, কর্দমাক্ত আর দারিদ্র্যে ভরা এলাকা। তখনকার লন্ডন ছিল শিল্পবিপ্লবের নগর, কিন্তু এই অঞ্চলে ছিল সমাজের নিচুতলার মানুষ— মজুর, দাস, পতিতা, আর ভবঘুরেদের আবাস। গলির পর গলিতে গ্যাসলাইটের নিচে ধোঁয়া আর কুয়াশা ভেসে বেড়ায়। সেই কুয়াশার আড়ালেই এক অদৃশ্য আতঙ্কেপ পদচারনা — যার পরে হয়ে ওঠে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ের নামগুলির একটি: ‘জ্যাক দ্য রিপার’।
১৮৮৮ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে, মাত্র তিন মাসে, পাঁচজন মহিলাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের সবাই ছিল যৌনকর্মী। কিন্তু হত্যাগুলোর ধরন এতটাই ভিন্ন, এতটাই ভৌতিক, যে তখনকার পুলিশ পর্যন্ত হতভম্ব হয়ে যায়।
প্রথম দেহটি পাওয়া যায় ৩১ আগস্ট, মেরি অ্যান নিকোলস নামের এক মহিলার। তাঁর গলা কাটা, পেট ছিন্নভিন্ন, দেহের ভেতর থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তুলে নেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন পরই একইভাবে খুন হয় অ্যানি চ্যাপম্যান। একইভাবে তারও দেহ নিপুনভাবে কেটে ফেলা হয়েছিল —যেন কোনও অভিজ্ঞ সার্জনের হাতের কাজ। তৃতীয় খুনটি ঘটে সেপ্টেম্বরেই। এলিজাবেথ স্ট্রাইড নামে এক মহিলাকে খুন করা হয় । আর ঠিক তার এক ঘণ্টার মধ্যে অকুস্থলের কাছেই খুন হয় ক্যাথরিন এডোওয়েস। যার দেহ এমন ভয়ঙ্করভাবে বিকৃত করা হয়েছিল যে, তা দেখে লন্ডন পুলিশের হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের তদন্তকারীদেরও পায়ের তলার মাটি সরে যায়।
এরপরেও আরও বিভীষিকার অপেক্ষা ছিল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খুনটি হয় ৯ নভেম্বর। মেরি জেন কেলি, এক ২৫ বছরের তরুণী। তাঁর পুরো ঘর রক্তে ভেসে গিয়েছিল। দেহ টুকরো টুকরো। পুলিশ বলে, এমন দৃশ্য তারা জীবনে দেখেননি।
খুনি প্রতিটি হত্যার পরই যেন আরও আত্মবিশ্বাসী হচ্ছিল। কিন্তু তাঁর পরিচয় অজানা। তার মুখ কেউ দেখেনি। কেউ তার পদধ্বনিও শোনেনি। পুলিশের হাতে আসে একাধিক চিঠি—লাল কালিতে লেখা, কারও স্বাক্ষর ‘From Hell’, আর কারও ‘Yours Truly, Jack the Ripper’।” এখান থেকেই জন্ম নেয় অপরাধা দুনিয়ার সবচেয়ে আতঙ্কের নামটি,– ‘জ্যাক দ্য রিপার’।
পুলিশের হাতে আসা চিঠিগুলি ছিল ভয়ঙ্কর। তার একটিতে লেখা ছিল— ‘তোমাদের পুলিশ আমাকে কখনও ধরতে পারবে না। আমি আবারও খুন করব।’ সরাসরি পুলিশ-গোয়েন্দাদের চ্যালেঞ্জ। একটি চিঠির সঙ্গে নাকি পাঠানো হয়েছিল মানুষের কাটা কিডনি—যা দাবি করা হয়, খুন হওয়া এক মহিলার দেহ থেকে নেওয়া। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হতেই, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা লন্ডনে।
তদন্ত শুরু হয় রাজকীয়ভাবে। শতাধিক সন্দেহভাজনকে জেরা করা হয়—কসাই, ডাক্তার, মানসিক রোগী, এমনকি রাজপরিবারের সদস্যদের নামও জড়িয়ে যায় ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে। কেউ বলেন, খুনি ছিল কোনও বিকৃতমনস্ক সার্জন; কেউ বলেন, ইহুদি অভিবাসী শ্রমিক; কেউ বা দাবি করেন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের ভেতরের কেউ, যিনি তাঁর গোপন কেলেঙ্কারি লুকোচ্ছিলেন।
তবুও কোনও প্রমাণ মেলেনি। খুনি যেমন হঠাৎ হাজির হয়েছিল, তেমনই হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। শেষ খুনের পর আর কোনও ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ ফাইল বন্ধ করে দেয়
কিন্তু লন্ডন শহর আজও সেই বিভীষিকা ভুলতে পারেনি। হোয়াইটচ্যাপেলের সেই গলিগুলিতে আজও রাতের কুয়াশায় মনে হয়, কেউ যেন নিঃশব্দে হাঁটছে। ‘জ্যাক দ্য রিপার’ হয়ে ওঠে লন্ডনের অন্ধকার ইতিহাসের প্রতীক—ভয়, যৌনতা, সমাজের অবহেলা, আর এক অজানা বিকৃত মানসিকতার চিহ্ন।
এই ঘটনাই আধুনিক ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের ধারণা বদলে দেয়। তখনও ফরেনসিক প্রযুক্তি ছিল না, তবুও রিপার কেস থেকেই শুরু হয় ক্রাইম স্পটের বিশ্লেষণ, প্রোফাইলিং, আর সংবাদমাধ্যমে অপরাধ বৃত্তান্তের যুগ।
আজও ‘রিপারোলজি’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা শাখা আছে, যেখানে ইতিহাসবিদ, মনোবিজ্ঞানী, পুলিশ বিশেষজ্ঞরা খোঁজেন সেই মানুষটিকে, যে শতাব্দী আগে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল লন্ডনে। কেউ বলেন, রিপার হয়তো তখনই মারা গিয়েছিল, কেউ মনে করেন সে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। আর কেউ কেউ বিশ্বাস করেন—সে হয়তো কখনওই ধরা পড়েনি, কারণ সে ছিল সমাজেরই এক মুখ, যাকে আমরা প্রতিদিনই দেখি।
জ্যাক দ্য রিপারের কাহিনি আজও লন্ডনের ট্যুরিস্ট ম্যাপে রয়েছে। হোয়াইটচ্যাপেলের গলিগুলিতে ‘রিপার ওয়াক’ নামে রাতের ট্যুর হয়, যেখানে গাইডরা মশাল হাতে বলে চলেন সেই ভয়ঙ্কর রাতের গল্প। আর ইন্টারনেটে আজও কোটি কোটি মানুষ বিতর্ক মেতে রয়েছে—‘আসলে কে ছিল জ্যাক দ্য রিপার?’
আজ একশো বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তবুও সেই নাম উচ্চারণ করলে আজও শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। ইতিহাসে অনেক খুনি এসেছে, কিন্তু ‘জ্যাক দ্য রিপার’ এক অদ্ভুত স্থায়ী আতঙ্ক—যেখানে ভয়, রহস্য, আর মানুষের বিকৃত কৌতূহল মিশে তৈরি হয়েছে এক অমর কিংবদন্তি।
১৮৮৮ সালের শরৎকাল। লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল নামে এক অন্ধকার, কর্দমাক্ত আর দারিদ্র্যে ভরা এলাকা। তখনকার লন্ডন ছিল শিল্পবিপ্লবের নগর, কিন্তু এই অঞ্চলে ছিল সমাজের নিচুতলার মানুষ— মজুর, দাস, পতিতা, আর ভবঘুরেদের আবাস। গলির পর গলিতে গ্যাসলাইটের নিচে ধোঁয়া আর কুয়াশা ভেসে বেড়ায়। সেই কুয়াশার আড়ালেই এক অদৃশ্য আতঙ্কেপ পদচারনা — যার পরে হয়ে ওঠে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ের নামগুলির একটি: ‘জ্যাক দ্য রিপার’।
১৮৮৮ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে, মাত্র তিন মাসে, পাঁচজন মহিলাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের সবাই ছিল যৌনকর্মী। কিন্তু হত্যাগুলোর ধরন এতটাই ভিন্ন, এতটাই ভৌতিক, যে তখনকার পুলিশ পর্যন্ত হতভম্ব হয়ে যায়।
প্রথম দেহটি পাওয়া যায় ৩১ আগস্ট, মেরি অ্যান নিকোলস নামের এক মহিলার। তাঁর গলা কাটা, পেট ছিন্নভিন্ন, দেহের ভেতর থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তুলে নেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন পরই একইভাবে খুন হয় অ্যানি চ্যাপম্যান। একইভাবে তারও দেহ নিপুনভাবে কেটে ফেলা হয়েছিল —যেন কোনও অভিজ্ঞ সার্জনের হাতের কাজ। তৃতীয় খুনটি ঘটে সেপ্টেম্বরেই। এলিজাবেথ স্ট্রাইড নামে এক মহিলাকে খুন করা হয় । আর ঠিক তার এক ঘণ্টার মধ্যে অকুস্থলের কাছেই খুন হয় ক্যাথরিন এডোওয়েস। যার দেহ এমন ভয়ঙ্করভাবে বিকৃত করা হয়েছিল যে, তা দেখে লন্ডন পুলিশের হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের তদন্তকারীদেরও পায়ের তলার মাটি সরে যায়।
এরপরেও আরও বিভীষিকার অপেক্ষা ছিল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খুনটি হয় ৯ নভেম্বর। মেরি জেন কেলি, এক ২৫ বছরের তরুণী। তাঁর পুরো ঘর রক্তে ভেসে গিয়েছিল। দেহ টুকরো টুকরো। পুলিশ বলে, এমন দৃশ্য তারা জীবনে দেখেননি।
খুনি প্রতিটি হত্যার পরই যেন আরও আত্মবিশ্বাসী হচ্ছিল। কিন্তু তাঁর পরিচয় অজানা। তার মুখ কেউ দেখেনি। কেউ তার পদধ্বনিও শোনেনি। পুলিশের হাতে আসে একাধিক চিঠি—লাল কালিতে লেখা, কারও স্বাক্ষর ‘From Hell’, আর কারও ‘Yours Truly, Jack the Ripper’।” এখান থেকেই জন্ম নেয় অপরাধা দুনিয়ার সবচেয়ে আতঙ্কের নামটি,– ‘জ্যাক দ্য রিপার’।
পুলিশের হাতে আসা চিঠিগুলি ছিল ভয়ঙ্কর। তার একটিতে লেখা ছিল— ‘তোমাদের পুলিশ আমাকে কখনও ধরতে পারবে না। আমি আবারও খুন করব।’ সরাসরি পুলিশ-গোয়েন্দাদের চ্যালেঞ্জ। একটি চিঠির সঙ্গে নাকি পাঠানো হয়েছিল মানুষের কাটা কিডনি—যা দাবি করা হয়, খুন হওয়া এক মহিলার দেহ থেকে নেওয়া। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হতেই, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা লন্ডনে।
তদন্ত শুরু হয় রাজকীয়ভাবে। শতাধিক সন্দেহভাজনকে জেরা করা হয়—কসাই, ডাক্তার, মানসিক রোগী, এমনকি রাজপরিবারের সদস্যদের নামও জড়িয়ে যায় ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে। কেউ বলেন, খুনি ছিল কোনও বিকৃতমনস্ক সার্জন; কেউ বলেন, ইহুদি অভিবাসী শ্রমিক; কেউ বা দাবি করেন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের ভেতরের কেউ, যিনি তাঁর গোপন কেলেঙ্কারি লুকোচ্ছিলেন।
তবুও কোনও প্রমাণ মেলেনি। খুনি যেমন হঠাৎ হাজির হয়েছিল, তেমনই হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। শেষ খুনের পর আর কোনও ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ ফাইল বন্ধ করে দেয়
কিন্তু লন্ডন শহর আজও সেই বিভীষিকা ভুলতে পারেনি। হোয়াইটচ্যাপেলের সেই গলিগুলিতে আজও রাতের কুয়াশায় মনে হয়, কেউ যেন নিঃশব্দে হাঁটছে। ‘জ্যাক দ্য রিপার’ হয়ে ওঠে লন্ডনের অন্ধকার ইতিহাসের প্রতীক—ভয়, যৌনতা, সমাজের অবহেলা, আর এক অজানা বিকৃত মানসিকতার চিহ্ন।
এই ঘটনাই আধুনিক ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের ধারণা বদলে দেয়। তখনও ফরেনসিক প্রযুক্তি ছিল না, তবুও রিপার কেস থেকেই শুরু হয় ক্রাইম স্পটের বিশ্লেষণ, প্রোফাইলিং, আর সংবাদমাধ্যমে অপরাধ বৃত্তান্তের যুগ।
আজও ‘রিপারোলজি’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা শাখা আছে, যেখানে ইতিহাসবিদ, মনোবিজ্ঞানী, পুলিশ বিশেষজ্ঞরা খোঁজেন সেই মানুষটিকে, যে শতাব্দী আগে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল লন্ডনে। কেউ বলেন, রিপার হয়তো তখনই মারা গিয়েছিল, কেউ মনে করেন সে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। আর কেউ কেউ বিশ্বাস করেন—সে হয়তো কখনওই ধরা পড়েনি, কারণ সে ছিল সমাজেরই এক মুখ, যাকে আমরা প্রতিদিনই দেখি।
জ্যাক দ্য রিপারের কাহিনি আজও লন্ডনের ট্যুরিস্ট ম্যাপে রয়েছে। হোয়াইটচ্যাপেলের গলিগুলিতে ‘রিপার ওয়াক’ নামে রাতের ট্যুর হয়, যেখানে গাইডরা মশাল হাতে বলে চলেন সেই ভয়ঙ্কর রাতের গল্প। আর ইন্টারনেটে আজও কোটি কোটি মানুষ বিতর্ক মেতে রয়েছে—‘আসলে কে ছিল জ্যাক দ্য রিপার?’
আজ একশো বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তবুও সেই নাম উচ্চারণ করলে আজও শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। ইতিহাসে অনেক খুনি এসেছে, কিন্তু ‘জ্যাক দ্য রিপার’ এক অদ্ভুত স্থায়ী আতঙ্ক—যেখানে ভয়, রহস্য, আর মানুষের বিকৃত কৌতূহল মিশে তৈরি হয়েছে এক অমর কিংবদন্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন