ফেসবুক রিলে অর্ধনগ্ন ও যৌন সুড়সুড়ি ভিডিওয় ভরে গেছে নিউজফিড। মেটা কেন থামাতে পারছে না এই অশ্লীলতার ঢেউ? জানুন আসল কারণ।
ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে এখন প্রায়ই চোখে পড়ে অর্ধনগ্ন নারীদের শরীর প্রদর্শনের রিল—যেখানে উন্মুক্ত বা অর্ধ উন্মুক্ত স্তন, যৌনাঙ্গ, স্নানের দৃশ্য বা যৌন ভঙ্গির অভিনয় স্পষ্ট। অথচ এই ভিডিওগুলি মেটার কঠোর নীতির মধ্যেও অবারিতভাবে ঘুরছে কোটি কোটি দর্শকের টাইমলাইনে। প্রশ্ন জাগে, কেন এই প্ল্যাটফর্ম এমন কনটেন্ট আটকায় না? উত্তরটা সহজ নয়, বরং প্রযুক্তি, অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব ও সমাজ—এই চার দিক জুড়ে লুকিয়ে আছে এর কারণ।
মেটা বা ফেসবুকের নিয়ম অনুযায়ী নগ্নতা, যৌন দৃশ্য বা পর্নোগ্রাফি প্রকাশ করা একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু সেখানে ‘শিল্প’, ‘শিক্ষা’ বা ‘বডি পজিটিভিটি’র নামে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই ফাঁক গলেই অনেকেই শরীর প্রদর্শনকে ‘নাচ’ বা ‘ফ্যাশন’ বা ‘ফিটনেস’ কনটেন্ট বলে সাজিয়ে তোলে। অ্যালগরিদম বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রায়ই ত্বকের রঙ, পোশাকের দৈর্ঘ্য বা ভঙ্গি থেকে যৌন উদ্দেশ্য চিনতে পারে না। ফলে ভিডিওটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ না গিয়ে সবার সামনে চলে আসে।
তবে এর পেছনে আরও গভীর একটি প্রবণতা কাজ করে—এটি ‘এনগেজমেন্ট ইকোনমি’। যৌন আবেদনপূর্ণ ভিডিওতে সাধারণত ভিউ, রিয়্যাকশন ও মন্তব্যের সংখ্যা বেশি হয়। ফলে ব্যবহারকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে প্ল্যাটফর্মে থাকে, বিজ্ঞাপনও বেশি দেখা যায়, আর মেটার আয়ও বেড়ে যায়। তাই কোথাও না কোথাও মেটার নীরব অনুমোদনও এতে জড়িয়ে আছে। আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যালগরিদমকে ফাঁকি দিয়ে এমন কনটেন্ট তৈরি করে যাতে রিপোর্ট পড়ার আগেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
অন্যদিকে, দর্শকও কম দায়ী নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেরা রিপোর্ট না করি বা ‘নট ইন্টারেস্টেড’ না দিই, অ্যালগরিদম ধরে নেয় দর্শকের এতে আপত্তি নেই। একবার এমন ভিডিও দেখলে বা থেমে গেলে অ্যালগরিদম ধরে নেয় আমরা আগ্রহী, তাই পরের বার আরও বেশি একই ধরনের রিল আমাদের স্ক্রিনে আসে। ফলে এটি এক ধরনের চক্রে পরিণত হয়েছে—দেখছে ব্যবহারকারী, দেখাচ্ছে মেটা, আর ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে অশ্লীলতা।
প্রশ্নটা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, সামাজিকও বটে। এই ধরনের ভিডিও বানানো মহিলারা বা ক্রিয়েটররা কেন এমন করে? এর পেছনে আছে মনোযোগ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অর্থ উপার্জনের সুযোগ এবং এক ধরনের বিকৃত জনপ্রিয়তার ধারণা। ফলোয়ার সংখ্যা, লাইক, ব্র্যান্ড ডিল বা ইনকাম—সবই আজ শরীরের দৃশ্যমানতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। অনেকে নিজের শরীরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে, কারণ সেটিই এখন সহজতম পথ ‘দেখা যাওয়ার’। এই প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাশ্চাত্যের ‘বডি কনফিডেন্স’ সংস্কৃতি, যা অনেকেই ভুলভাবে অনুকরণ করে—ভাবছে খোলামেলা মানেই আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বাস্তবে সেটি পরিণত হয়েছে শরীরের বাণিজ্যে।
এই প্রবণতা মূলত এক বৃহত্তর সামাজিক অসুখের ইঙ্গিত দেয়—যেখানে প্রযুক্তি ও বাজার মিলেমিশে মানুষকে পরিণত করছে দেহনির্ভর প্রদর্শনীর অংশে। প্ল্যাটফর্ম যেমন দায়ী, তেমনি আমরা ব্যবহারকারীরাও। কারণ প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি ভিউ, প্রতিটি মন্তব্য আসলে এই সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। তাই অশ্লীল ভিডিও নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেই চলবে না, সচেতনভাবে রিপোর্ট করা, কনটেন্ট পছন্দ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ডিজিটাল নৈতিকতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই আসল প্রতিরোধ।
ফেসবুকের রিল আসলে এক ধরনের আয়না—যেখানে দেখা যায় আমাদের সমাজ কতটা শরীরনির্ভর, কতটা মনোযোগলোভী, আর কতটা প্রযুক্তির বন্দি হয়ে পড়েছে। এই আয়নায় প্রতিফলিত ছবিটা আমাদেরই তৈরি করা, তাই বদলাতেও আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে এখন প্রায়ই চোখে পড়ে অর্ধনগ্ন নারীদের শরীর প্রদর্শনের রিল—যেখানে উন্মুক্ত বা অর্ধ উন্মুক্ত স্তন, যৌনাঙ্গ, স্নানের দৃশ্য বা যৌন ভঙ্গির অভিনয় স্পষ্ট। অথচ এই ভিডিওগুলি মেটার কঠোর নীতির মধ্যেও অবারিতভাবে ঘুরছে কোটি কোটি দর্শকের টাইমলাইনে। প্রশ্ন জাগে, কেন এই প্ল্যাটফর্ম এমন কনটেন্ট আটকায় না? উত্তরটা সহজ নয়, বরং প্রযুক্তি, অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব ও সমাজ—এই চার দিক জুড়ে লুকিয়ে আছে এর কারণ।
মেটা বা ফেসবুকের নিয়ম অনুযায়ী নগ্নতা, যৌন দৃশ্য বা পর্নোগ্রাফি প্রকাশ করা একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু সেখানে ‘শিল্প’, ‘শিক্ষা’ বা ‘বডি পজিটিভিটি’র নামে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই ফাঁক গলেই অনেকেই শরীর প্রদর্শনকে ‘নাচ’ বা ‘ফ্যাশন’ বা ‘ফিটনেস’ কনটেন্ট বলে সাজিয়ে তোলে। অ্যালগরিদম বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রায়ই ত্বকের রঙ, পোশাকের দৈর্ঘ্য বা ভঙ্গি থেকে যৌন উদ্দেশ্য চিনতে পারে না। ফলে ভিডিওটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ না গিয়ে সবার সামনে চলে আসে।
তবে এর পেছনে আরও গভীর একটি প্রবণতা কাজ করে—এটি ‘এনগেজমেন্ট ইকোনমি’। যৌন আবেদনপূর্ণ ভিডিওতে সাধারণত ভিউ, রিয়্যাকশন ও মন্তব্যের সংখ্যা বেশি হয়। ফলে ব্যবহারকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে প্ল্যাটফর্মে থাকে, বিজ্ঞাপনও বেশি দেখা যায়, আর মেটার আয়ও বেড়ে যায়। তাই কোথাও না কোথাও মেটার নীরব অনুমোদনও এতে জড়িয়ে আছে। আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যালগরিদমকে ফাঁকি দিয়ে এমন কনটেন্ট তৈরি করে যাতে রিপোর্ট পড়ার আগেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
অন্যদিকে, দর্শকও কম দায়ী নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেরা রিপোর্ট না করি বা ‘নট ইন্টারেস্টেড’ না দিই, অ্যালগরিদম ধরে নেয় দর্শকের এতে আপত্তি নেই। একবার এমন ভিডিও দেখলে বা থেমে গেলে অ্যালগরিদম ধরে নেয় আমরা আগ্রহী, তাই পরের বার আরও বেশি একই ধরনের রিল আমাদের স্ক্রিনে আসে। ফলে এটি এক ধরনের চক্রে পরিণত হয়েছে—দেখছে ব্যবহারকারী, দেখাচ্ছে মেটা, আর ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে অশ্লীলতা।
প্রশ্নটা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, সামাজিকও বটে। এই ধরনের ভিডিও বানানো মহিলারা বা ক্রিয়েটররা কেন এমন করে? এর পেছনে আছে মনোযোগ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অর্থ উপার্জনের সুযোগ এবং এক ধরনের বিকৃত জনপ্রিয়তার ধারণা। ফলোয়ার সংখ্যা, লাইক, ব্র্যান্ড ডিল বা ইনকাম—সবই আজ শরীরের দৃশ্যমানতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। অনেকে নিজের শরীরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে, কারণ সেটিই এখন সহজতম পথ ‘দেখা যাওয়ার’। এই প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাশ্চাত্যের ‘বডি কনফিডেন্স’ সংস্কৃতি, যা অনেকেই ভুলভাবে অনুকরণ করে—ভাবছে খোলামেলা মানেই আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বাস্তবে সেটি পরিণত হয়েছে শরীরের বাণিজ্যে।
এই প্রবণতা মূলত এক বৃহত্তর সামাজিক অসুখের ইঙ্গিত দেয়—যেখানে প্রযুক্তি ও বাজার মিলেমিশে মানুষকে পরিণত করছে দেহনির্ভর প্রদর্শনীর অংশে। প্ল্যাটফর্ম যেমন দায়ী, তেমনি আমরা ব্যবহারকারীরাও। কারণ প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি ভিউ, প্রতিটি মন্তব্য আসলে এই সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। তাই অশ্লীল ভিডিও নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেই চলবে না, সচেতনভাবে রিপোর্ট করা, কনটেন্ট পছন্দ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ডিজিটাল নৈতিকতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই আসল প্রতিরোধ।
ফেসবুকের রিল আসলে এক ধরনের আয়না—যেখানে দেখা যায় আমাদের সমাজ কতটা শরীরনির্ভর, কতটা মনোযোগলোভী, আর কতটা প্রযুক্তির বন্দি হয়ে পড়েছে। এই আয়নায় প্রতিফলিত ছবিটা আমাদেরই তৈরি করা, তাই বদলাতেও আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন