বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা এক শতাব্দীর ব্যবধানে বৈশ্বিক গড় উষ্ণতার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে।
অ্যান্টার্কটিকা, পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর বরফে ঢাকা এই মহাদেশটি একদিকে রহস্যময় ও অজানা, অন্যদিকে আমাদের বৈশ্বিক পরিবেশ ও জলবায়ুর ভারসাম্যের মূল ভিত্তি। এখানে জমে থাকা অগণিত বরফস্তর শুধু ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসই ধারণ করে না, বরং পৃথিবীর জলবায়ুর ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত সতর্ক করে আসছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ এই বরফরাজ্যকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকার গলতে থাকা হিমবাহ এখন মানবসভ্যতার জন্য অদৃশ্য এক যুদ্ধের প্রতীক, যার ফলাফল পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশ ও সমুদ্রকে ছুঁয়ে যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা এক শতাব্দীর ব্যবধানে বৈশ্বিক গড় উষ্ণতার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এর গবেষক ড. অ্যান্ড্রু শেফার্ডের মতে, ১৯৯২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় তিন ট্রিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে এই মহাদেশ। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায়। শুধু পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার থওয়েটস গ্লেসিয়ারকেই বিজ্ঞানীরা ‘ডুমসডে গ্লেসিয়ার’ নামে আখ্যা দিয়েছেন, কারণ একে পুরোপুরি গলে যেতে দিলে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৬৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। নাসার বিজ্ঞানী এরিক রিগনটও সতর্ক করেছেন যে, অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার হার যেভাবে দ্রুত বাড়ছে, তা আগামী একশো বছর নয়, বরং কয়েক দশকের মধ্যেই উপকূলীয় শহরগুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বরফ গলার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আরেকটি জটিলতা হল মহাসাগরের স্রোত ও বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থা। অ্যান্টার্কটিকার আশেপাশের সমুদ্র বরফ গলে গেলে সমুদ্রের লবণাক্ততা ও তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়, যার ফলে সাউদার্ন ওশান থেকে শুরু করে আটলান্টিকের গভীর স্রোত পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ অধ্যাপক জেমস হ্যানসেন বলেছেন, “অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়া মানে শুধু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নয়, বরং পৃথিবীর সমগ্র জলবায়ু ব্যবস্থার এক বিপজ্জনক পুনর্বিন্যাস।” এর ফলে এশিয়ার মৌসুমি বৃষ্টি থেকে শুরু করে আফ্রিকার খরা এবং ইউরোপের ঝড়—সবকিছুই অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।
এই সংকট শুধু পরিবেশ নয়, জীববৈচিত্র্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। পেঙ্গুইন, সিল, ক্রিল মাছসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী তাদের জীবনচক্রের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকার বরফ ও জলবায়ুর ভারসাম্যের উপর নির্ভরশীল। যখন বরফের স্তর ভেঙে যাচ্ছে, তখন তাদের খাদ্য ও প্রজননক্ষেত্রও সংকুচিত হচ্ছে। ম্যারিন বায়োলজিস্ট ড. সিলভিয়া আর্ল বলেছেন, “অ্যান্টার্কটিকার বরফ শুধু বরফ নয়, এটি জীবনের আধার। এর ক্ষয় মানে এক অদৃশ্য মহাপ্রলয়ের সূচনা।”
বিজ্ঞানীরা একদিকে বৈশ্বিক নীতি ও পরিবেশ রক্ষার চুক্তিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে মানুষের কাছে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, অ্যান্টার্কটিকার সংকট কোনো দূরবর্তী অঞ্চলের সমস্যা নয়। ভারতের সুন্দরবন, বাংলাদেশের উপকূল, মালদ্বীপ কিংবা নিউ ইয়র্ক—সবাই সমানভাবে এর শিকার হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দ্রুত কার্বন নির্গমন কমানো না হয়, তবে আগামী একশো বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির কারণে কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।
অ্যান্টার্কটিকা তাই আজ শুধু একটি বরফাচ্ছন্ন মহাদেশ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মানবজাতির সংগ্রামের এক প্রতীক। এখানে যে অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে, তা আসলে আমাদেরই অস্তিত্বের লড়াই। বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়ে গেছেন, কিন্তু তাদের কথা শোনার দায়িত্ব আমাদের। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে অ্যান্টার্কটিকার গলিত বরফের স্রোত শুধু সমুদ্র নয়, মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎকেও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
অ্যান্টার্কটিকা, পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর বরফে ঢাকা এই মহাদেশটি একদিকে রহস্যময় ও অজানা, অন্যদিকে আমাদের বৈশ্বিক পরিবেশ ও জলবায়ুর ভারসাম্যের মূল ভিত্তি। এখানে জমে থাকা অগণিত বরফস্তর শুধু ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসই ধারণ করে না, বরং পৃথিবীর জলবায়ুর ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত সতর্ক করে আসছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ এই বরফরাজ্যকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকার গলতে থাকা হিমবাহ এখন মানবসভ্যতার জন্য অদৃশ্য এক যুদ্ধের প্রতীক, যার ফলাফল পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশ ও সমুদ্রকে ছুঁয়ে যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা এক শতাব্দীর ব্যবধানে বৈশ্বিক গড় উষ্ণতার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এর গবেষক ড. অ্যান্ড্রু শেফার্ডের মতে, ১৯৯২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় তিন ট্রিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে এই মহাদেশ। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায়। শুধু পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার থওয়েটস গ্লেসিয়ারকেই বিজ্ঞানীরা ‘ডুমসডে গ্লেসিয়ার’ নামে আখ্যা দিয়েছেন, কারণ একে পুরোপুরি গলে যেতে দিলে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৬৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। নাসার বিজ্ঞানী এরিক রিগনটও সতর্ক করেছেন যে, অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার হার যেভাবে দ্রুত বাড়ছে, তা আগামী একশো বছর নয়, বরং কয়েক দশকের মধ্যেই উপকূলীয় শহরগুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বরফ গলার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আরেকটি জটিলতা হল মহাসাগরের স্রোত ও বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থা। অ্যান্টার্কটিকার আশেপাশের সমুদ্র বরফ গলে গেলে সমুদ্রের লবণাক্ততা ও তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়, যার ফলে সাউদার্ন ওশান থেকে শুরু করে আটলান্টিকের গভীর স্রোত পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ অধ্যাপক জেমস হ্যানসেন বলেছেন, “অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়া মানে শুধু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নয়, বরং পৃথিবীর সমগ্র জলবায়ু ব্যবস্থার এক বিপজ্জনক পুনর্বিন্যাস।” এর ফলে এশিয়ার মৌসুমি বৃষ্টি থেকে শুরু করে আফ্রিকার খরা এবং ইউরোপের ঝড়—সবকিছুই অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।
এই সংকট শুধু পরিবেশ নয়, জীববৈচিত্র্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। পেঙ্গুইন, সিল, ক্রিল মাছসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী তাদের জীবনচক্রের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকার বরফ ও জলবায়ুর ভারসাম্যের উপর নির্ভরশীল। যখন বরফের স্তর ভেঙে যাচ্ছে, তখন তাদের খাদ্য ও প্রজননক্ষেত্রও সংকুচিত হচ্ছে। ম্যারিন বায়োলজিস্ট ড. সিলভিয়া আর্ল বলেছেন, “অ্যান্টার্কটিকার বরফ শুধু বরফ নয়, এটি জীবনের আধার। এর ক্ষয় মানে এক অদৃশ্য মহাপ্রলয়ের সূচনা।”
বিজ্ঞানীরা একদিকে বৈশ্বিক নীতি ও পরিবেশ রক্ষার চুক্তিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে মানুষের কাছে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, অ্যান্টার্কটিকার সংকট কোনো দূরবর্তী অঞ্চলের সমস্যা নয়। ভারতের সুন্দরবন, বাংলাদেশের উপকূল, মালদ্বীপ কিংবা নিউ ইয়র্ক—সবাই সমানভাবে এর শিকার হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দ্রুত কার্বন নির্গমন কমানো না হয়, তবে আগামী একশো বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির কারণে কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।
অ্যান্টার্কটিকা তাই আজ শুধু একটি বরফাচ্ছন্ন মহাদেশ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মানবজাতির সংগ্রামের এক প্রতীক। এখানে যে অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে, তা আসলে আমাদেরই অস্তিত্বের লড়াই। বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়ে গেছেন, কিন্তু তাদের কথা শোনার দায়িত্ব আমাদের। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে অ্যান্টার্কটিকার গলিত বরফের স্রোত শুধু সমুদ্র নয়, মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎকেও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন